ঢাকা ০৭:২২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪

গোমস্তাপুরে ১৫ দিনে উধাও ১০ লক্ষ টাকার রাস্তা

জুলকার নাইন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ
কোথাও হাঁটুভর্তি কাদা, কোথাও পানি, আবার কোথাও বালুর ভরাট। দুই ধারে ফসলী জমি দেখে মনে হবে মধ্য দিয়ে ছোট যান চলাচলের মাটির রাস্তা। অথচ এখানে থাকার কথা ছিল দুই স্তরের মজবুত ইটের হেয়ারিং রাস্তা। ১৫ দিন আগে আনুমানিক মাত্র ২০০ মিটার এজিং (ইটের তৈরি) রাস্তার জন্য ব্যয় করা হয়েছে ১০ লক্ষ টাকা। কিন্তু সোমবার (০৯ আগষ্ট) দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে কোন ইটের রাস্তা খুঁজে পাওয়া যায়নি। এমন অদ্ভুত একটি রাস্তার খোঁজ মিলেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার বিশুক্ষেত্র-গোঙ্গলপুর গ্রামের আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকায়।
বিশুক্ষেত্র-গোঙ্গলপাড়া মাঠে ফসলী জমিতে পাশেই চলছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণ কাজ। অন্য রাস্তার সাথে আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকার সংযোগ স্থাপন ও নির্মাণসমাগ্রী পরিবহনের কাজে ব্যবহারের জন্য রাস্তাটি নির্মাণ করা হয়। গোমস্তাপুর উপজেলা এলজিইডি ১০ লক্ষ টাকা ব্যয় করে রাস্তাটি নির্মাণ করে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার, পর্যাপ্ত পরিমাণে উপকরণ না দেয়া, নিচে ভরাট বালু কম দেয়া, পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না রাখার কারনে এমন দশা। তারা বলছেন, সঠিক পরিকল্পনার অভাব ও কাজে গাফেলতির কারনে ১০ লক্ষ টাকার রাস্তার কোন সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে না। বরাদ্দ হলেও তার সঠিক বাস্তবায়ন হয়নি। ৮ ফিট প্রসস্থ বিশিষ্ট রাস্তাটি নামে থাকলেও কোন কাজে আসছে না বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।
আশ্রয়ণ প্রকল্পে কাজ করা এক শ্রমিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, রাস্তার কাজ শুরু হওয়া থেকে শেষ পর্যন্ত আমি পাশেই সরকারি ঘর নির্মাণ প্রকল্পে কাজ করছি। আমাদের কাজের এখানে রড, বালু, সিমেন্ট, ইট নিয়ে আসার জন্যই রাস্তাটি করা হয়েছে। কয়েকদিন হলো রাস্তার কাজ শেষ হওয়া। অথচ এখন খুঁজেই পাওয়া যাবে না।
তিনি আরও বলেন, নিজের চোখে দেখা কাজ এটা। নিশ্চিত করে বলতে পারি কাজ ভালো হয়নি। কারন যারা ইঞ্জিনিয়ার তারা কি জানে না, যে রাস্তাটি কেন কি কাজে ব্যবহার করা হবে? তাহলে সেভাবে রাস্তা করতে হতো। শুনলাম এইটুকু রাস্তায় নাকি ১০ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। এটা কিভাবে সম্ভব! নিচে ঠিকমতো বালু ভরাট করা হয়নি। যতটুকু দরকার, তার থেকে কম পরিমাণে বালু দিয়েই ইট বিছানো হয়েছে।
রাস্তা সংলগ্ন জমিতে ধান চাষাবাদ করেন কৃষক কাউসার আলী। তিনি বলেন, টিভিতে দেখেছি, সরকারি ঘরগুলো ভেঙ্গে পড়ছে। মনে হয়, রাস্তাও সেভাবেই তৈরি হয়েছে। কাঁচা মাটিতেই ভরাট না দিয়ে রাস্তা করার কারনে এমনটা হয়েছে৷ এখানকার আবাদি মাটিগুলো একটু অন্যরকম। এখানে মাটি খুড়ে রাস্তা করাটা সবচেয়ে বোকামি। মাটির উপরেই বালু ভরাট করে ইটের রাস্তা করলে এমন অবস্থা হতো না।
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুর রহমান জানান, এঁটেল মাটির উপর মাটি খুঁড়ে কোনদিন রাস্তা হয়? তাও আবার নিচে বালু ভরাট কম। এভাবে রাস্তা টিকবে না। ট্রাক ও ট্রাক্টর নিয়ে আসার জন্য ১০ লক্ষ টাকা দিয়ে রাস্তা তৈরি করলে ১৫ দিনেই স্বপ্ন ভঙ্গ। এখন ইট, রড, সিমেন্ট, বালু নিয়ে ট্রাক ও ট্রাক্টরগুলো আসতেই পারছে না। রাস্তা না থাকলে আসবে কেমন করে। যে ইটগুলো বিছিয়েছিলো, তা মাটিতে দেবে গেছে।
গোমস্তাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জামাল উদ্দীন জামাল মন্ডল বলেন, আমি রাস্তা তৈরির সময়েই বলেছিলাম, আগে ইট দিয়ে রাস্তা ঘিরতে হবে। তা না হলে পাশের ফসলী জমির পানি ও বৃষ্টির পানি এসে রাস্তা নষ্ট হবে। রাস্তা নির্মাণের পরে তা-ই হয়েছে। বৃষ্টির পানি এসে রাস্তা দেবে গেছে। পরে আমি নিজ খরচে রাস্তার পাশ দিয়ে পানি নামার জন্য ড্রেন নির্মাণ করেছি।
গোমস্তাপুর উপজেলা এলজিইডি’র প্রকৌশলী নূরুল আফসার মোহাম্মদ সুলতানুল ইমাম  বলেন, পুরাতন মাটির রাস্তার উপর পুনরায় ইটের রাস্তা নির্মাণ করলে কোন সমস্যা হয় না। কিন্তু এক্ষেত্রে ধানের জমির উপর দিয়ে রাস্তাটি করা হয়েছে। নরম, কাঁদা মাটিতে রাস্তা করার কারনে গাড়ি চলতে গিয়ে দেবে গেছে। সকল নিয়ম মেনে রাস্তাটি নির্মাণ করা হয়েছে। এই মূহুর্তে নতুন করে রাস্তাটি নির্মাণের পরিকল্পনা নেই বলে জানান তিনি।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. হাবিবুর রহমান জানান, আশ্রয়ণ প্রকল্পের সাথে সংযোগ ও নির্মাণ সামগ্রী নিয়ে যেতেই রাস্তাটি নির্মাণ করা হয়েছে। তবে এটি এলজিইডি নির্মাণ করেছে। এবিষয়ে কোন মন্তব্য করতে পারবো না।
গোমস্তাপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব হুমায়ন রেজা বলেন, কাঁদামাটি ও অতিরিক্ত বৃষ্টির কারনে রাস্তাটির এমন দশা হয়েছে। অতি জরুরি ভিক্তিতে রাস্তাটি নির্মাণ করা হয়েছিলো। কিন্তু রাস্তা নির্মাণের আগে ও পরে প্রচুর বৃষ্টিপাত হওয়ায় দেবে গেছে।
Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

মির্জাগঞ্জে রাতের আধারে বসতঘর লুটপাট

গোমস্তাপুরে ১৫ দিনে উধাও ১০ লক্ষ টাকার রাস্তা

আপডেট টাইম : ০২:১১:১৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ অগাস্ট ২০২১
জুলকার নাইন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ
কোথাও হাঁটুভর্তি কাদা, কোথাও পানি, আবার কোথাও বালুর ভরাট। দুই ধারে ফসলী জমি দেখে মনে হবে মধ্য দিয়ে ছোট যান চলাচলের মাটির রাস্তা। অথচ এখানে থাকার কথা ছিল দুই স্তরের মজবুত ইটের হেয়ারিং রাস্তা। ১৫ দিন আগে আনুমানিক মাত্র ২০০ মিটার এজিং (ইটের তৈরি) রাস্তার জন্য ব্যয় করা হয়েছে ১০ লক্ষ টাকা। কিন্তু সোমবার (০৯ আগষ্ট) দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে কোন ইটের রাস্তা খুঁজে পাওয়া যায়নি। এমন অদ্ভুত একটি রাস্তার খোঁজ মিলেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার বিশুক্ষেত্র-গোঙ্গলপুর গ্রামের আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকায়।
বিশুক্ষেত্র-গোঙ্গলপাড়া মাঠে ফসলী জমিতে পাশেই চলছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণ কাজ। অন্য রাস্তার সাথে আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকার সংযোগ স্থাপন ও নির্মাণসমাগ্রী পরিবহনের কাজে ব্যবহারের জন্য রাস্তাটি নির্মাণ করা হয়। গোমস্তাপুর উপজেলা এলজিইডি ১০ লক্ষ টাকা ব্যয় করে রাস্তাটি নির্মাণ করে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার, পর্যাপ্ত পরিমাণে উপকরণ না দেয়া, নিচে ভরাট বালু কম দেয়া, পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না রাখার কারনে এমন দশা। তারা বলছেন, সঠিক পরিকল্পনার অভাব ও কাজে গাফেলতির কারনে ১০ লক্ষ টাকার রাস্তার কোন সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে না। বরাদ্দ হলেও তার সঠিক বাস্তবায়ন হয়নি। ৮ ফিট প্রসস্থ বিশিষ্ট রাস্তাটি নামে থাকলেও কোন কাজে আসছে না বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।
আশ্রয়ণ প্রকল্পে কাজ করা এক শ্রমিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, রাস্তার কাজ শুরু হওয়া থেকে শেষ পর্যন্ত আমি পাশেই সরকারি ঘর নির্মাণ প্রকল্পে কাজ করছি। আমাদের কাজের এখানে রড, বালু, সিমেন্ট, ইট নিয়ে আসার জন্যই রাস্তাটি করা হয়েছে। কয়েকদিন হলো রাস্তার কাজ শেষ হওয়া। অথচ এখন খুঁজেই পাওয়া যাবে না।
তিনি আরও বলেন, নিজের চোখে দেখা কাজ এটা। নিশ্চিত করে বলতে পারি কাজ ভালো হয়নি। কারন যারা ইঞ্জিনিয়ার তারা কি জানে না, যে রাস্তাটি কেন কি কাজে ব্যবহার করা হবে? তাহলে সেভাবে রাস্তা করতে হতো। শুনলাম এইটুকু রাস্তায় নাকি ১০ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। এটা কিভাবে সম্ভব! নিচে ঠিকমতো বালু ভরাট করা হয়নি। যতটুকু দরকার, তার থেকে কম পরিমাণে বালু দিয়েই ইট বিছানো হয়েছে।
রাস্তা সংলগ্ন জমিতে ধান চাষাবাদ করেন কৃষক কাউসার আলী। তিনি বলেন, টিভিতে দেখেছি, সরকারি ঘরগুলো ভেঙ্গে পড়ছে। মনে হয়, রাস্তাও সেভাবেই তৈরি হয়েছে। কাঁচা মাটিতেই ভরাট না দিয়ে রাস্তা করার কারনে এমনটা হয়েছে৷ এখানকার আবাদি মাটিগুলো একটু অন্যরকম। এখানে মাটি খুড়ে রাস্তা করাটা সবচেয়ে বোকামি। মাটির উপরেই বালু ভরাট করে ইটের রাস্তা করলে এমন অবস্থা হতো না।
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুর রহমান জানান, এঁটেল মাটির উপর মাটি খুঁড়ে কোনদিন রাস্তা হয়? তাও আবার নিচে বালু ভরাট কম। এভাবে রাস্তা টিকবে না। ট্রাক ও ট্রাক্টর নিয়ে আসার জন্য ১০ লক্ষ টাকা দিয়ে রাস্তা তৈরি করলে ১৫ দিনেই স্বপ্ন ভঙ্গ। এখন ইট, রড, সিমেন্ট, বালু নিয়ে ট্রাক ও ট্রাক্টরগুলো আসতেই পারছে না। রাস্তা না থাকলে আসবে কেমন করে। যে ইটগুলো বিছিয়েছিলো, তা মাটিতে দেবে গেছে।
গোমস্তাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জামাল উদ্দীন জামাল মন্ডল বলেন, আমি রাস্তা তৈরির সময়েই বলেছিলাম, আগে ইট দিয়ে রাস্তা ঘিরতে হবে। তা না হলে পাশের ফসলী জমির পানি ও বৃষ্টির পানি এসে রাস্তা নষ্ট হবে। রাস্তা নির্মাণের পরে তা-ই হয়েছে। বৃষ্টির পানি এসে রাস্তা দেবে গেছে। পরে আমি নিজ খরচে রাস্তার পাশ দিয়ে পানি নামার জন্য ড্রেন নির্মাণ করেছি।
গোমস্তাপুর উপজেলা এলজিইডি’র প্রকৌশলী নূরুল আফসার মোহাম্মদ সুলতানুল ইমাম  বলেন, পুরাতন মাটির রাস্তার উপর পুনরায় ইটের রাস্তা নির্মাণ করলে কোন সমস্যা হয় না। কিন্তু এক্ষেত্রে ধানের জমির উপর দিয়ে রাস্তাটি করা হয়েছে। নরম, কাঁদা মাটিতে রাস্তা করার কারনে গাড়ি চলতে গিয়ে দেবে গেছে। সকল নিয়ম মেনে রাস্তাটি নির্মাণ করা হয়েছে। এই মূহুর্তে নতুন করে রাস্তাটি নির্মাণের পরিকল্পনা নেই বলে জানান তিনি।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. হাবিবুর রহমান জানান, আশ্রয়ণ প্রকল্পের সাথে সংযোগ ও নির্মাণ সামগ্রী নিয়ে যেতেই রাস্তাটি নির্মাণ করা হয়েছে। তবে এটি এলজিইডি নির্মাণ করেছে। এবিষয়ে কোন মন্তব্য করতে পারবো না।
গোমস্তাপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব হুমায়ন রেজা বলেন, কাঁদামাটি ও অতিরিক্ত বৃষ্টির কারনে রাস্তাটির এমন দশা হয়েছে। অতি জরুরি ভিক্তিতে রাস্তাটি নির্মাণ করা হয়েছিলো। কিন্তু রাস্তা নির্মাণের আগে ও পরে প্রচুর বৃষ্টিপাত হওয়ায় দেবে গেছে।