ঢাকা ১১:৫৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪

বাংলাদেশের রাজনিতীতে নিজস্ব স্বকীয়তায় পথ চলছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ

মু.হুমায়ুন কবির,বিশেষ প্রতিনিধি

 

নিবন্ধনের ক্রমানুযায়ী বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল সমূহের সংখ্যা ৪৪টি। অবশ্য নির্বাচন কমিশন ইতোপূর্বে বিভিন্ন কারণে পাঁচটি দলের নিবন্ধন বাতিল করেছে। প্রথমেই সংশোধিত গঠনতন্ত্র জমা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় ২০১০সালে ০৩৯ নং ক্রমিকে নিবন্ধিত কর্নেল ফারুক-রশীদের রাজনৈতিক দল ফ্রিডম পার্টির নিবন্ধন বাতিল হয়। এরপর ২০১৮ সালের ০৪ অক্টোবর শর্ত পূরণ করতে না পারায় বাতিল করা হয় কাজী ফারুকের ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলনের নিবন্ধন (নিবন্ধন নং-০২৯)। তালিকার ০১৪ নং ক্রমিকে থাকা বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন ২০১৩ সালে উচ্চ আদালতের এক আদেশে স্থাগিত হয় এবং ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর স্থায়ীভাবে বাতিল হয়ে যায়। বাতিল করা হয় তালিকার ০২৯ নং ক্রমিকে থাকা প্রগ্ৰেসিভ ডেমোক্রেটিভ পার্টি (PDP)’র নিবন্ধন। সর্বশেষ ২০২১সালের ০১ ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন কমিশনের এক প্রজ্ঞাপনে বাতিল করা হয় প্রয়াত শফিউল আলম প্রধানের দল জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি জাগপার নিবন্ধন।এ পাঁচটি দলকে হিসেবের বাইরে রাখার পর বর্তমানে দেশে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৯ টিতে।

এ ৩৯ টি দলের মধ্যে ইসলামী দল আছে ১২ টি। দলগুলো হলো— ১.চরমোনাই’র হযরত পীর সাহেব হুজুরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ২.প্রিন্সিপ্যাল মাওলানা মুহাম্মাদ হাবিবুর রহমানের বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ৩.হাফেজ মাওলানা আতাউল্লাহ হাফেজ্জীর নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন ৪.অধ্যক্ষ মাওলানা মোঃ ইসহাকের নেতৃত্বাধীন খেলাফত মজলিস ৫.আবদুল মু’মিন ও নূর হোসাইন কাসেমীর নেতৃত্বাধীন জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম ৬.আঃ লতিফ নেজামীর ইসলামী ঐক্যজোট ৭.আটরশী পীরের জাকের পার্টি ৮.কামরুজ্জামান খানের বাংলাদেশের মুসলিম লীগ (বিএম এল) ৯.সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারীর বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন ১০.বেগম জোবেদা কাদের চৌধুরীর মুসলিম লীগ ১১.সৈয়দ বাহাদুর শাহ-এর ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ এবং ১২.এম এ মান্নানের বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট। অনিবন্ধিত জামায়াত, নিজামে ইসলাম এবং মিসবাহুর রহমানের নেতৃত্বাধীন ইসলামী ঐক্যজোটের অংশটিকে গণনায় নিলে এ সংখ্যা এসে দাঁড়ায় ১৫টিতে।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক মাঠে বিচরণকারী সব ঘরানার নিবন্ধিত-অনিবন্ধিত এ সব রাজনৈতিক দলের নীতি-আদর্শ, লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের প্রতি একটু গভীর ভাবে দৃষ্টি দিলে দেখা যাবে যে,প্রায় অর্ধশত রাজনৈতিক দলের বিশাল বহরটা মোটামুটি তিনটি ব্লকে বিভাজিত। (০১)ডানপন্থী ব্লকঃ এ ব্লকে রয়েছে বিএনপি, জাতীয় পার্টি, বিজেপি,জেপি,জাগপা, বিকল্পধারা, কল্যাণ পার্টি,বিএন এফ, এলডিপি, এনপিপি এনডিএমসহ সমমনা দলগুলো।

(০২) বামপন্থী বা বামপন্থা দ্বারা প্রভাবিত স্যেকুলার ব্লকঃ এ ব্লকে রয়েছে আওয়ামী লীগ, গণফোরাম, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ,ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি,জাসদ,বাসদ, কমিউনিস্ট পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টি,গণ আজাদী পার্টি,ন্যাপ,সাম্যবাদী দল,জেএসডি গণফ্রন্ট ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি সহ সমমনা দল গুলো।

(০৩) ইসলামী ব্লকঃ এ ব্লকে রয়েছে ওপরে উল্লেখিত ১২ থেকে ১৫টি ইসলামী ভাবধারার দলগুলো।

এ দেশের সর্বস্তরের তৌহিদী জনতা যারা সত্যিকার অর্থে ইসলামকে ভালোবাসেন, বুকে লালন করেন,ধারন করেন আর এ ভালোবাসার কারনেই রাষ্ট্রীয় আদর্শ হিসেবে ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত দেখতে চান— তাদের কাছে ডান কিংবা বাম ধারার কোন রাজনীতিই গ্ৰহনযোগ্য নয়। কারন এ সব রাজনৈতিক দলের কোনোটিরই দলীয় ম্যানুফেষ্টে ইসলামকে রাষ্ট্রীয় আদর্শ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়নি বরং মানবীয় চিন্তা প্রসূত এমনসব দর্শনকে তারা দলীয় আদর্শ হিসেবে গ্ৰহন করেছে যা কোনো কোনো ক্ষেত্রে পুরোটাই আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে অংশ বিশেষ চরমভাবে ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক।

যে সকল মুসলিম ভাই-বোনেরা এসব দলের সাথে জড়িত আছেন তাদের কেউ কেউ হয়তো জেনে- বুঝেই এ সব দল করছেন। ওই সব নীতি-আদর্শের বাস্তবায়নই সমাজ-দেশ-জাতির মুক্তি, উন্নতি ও অগ্রগতির একমাত্র উপায় — এমন বিশ্বাসবোধ থেকেই তারা এ সব দলের ঘোর সমর্থক। কিন্তু অধিকাংশ মানুষই এসব দলের নীতি-আদর্শ ও বিশ্বাসবোধের গভীরতায় ঢুকেন না অথবা ঢোকার সুযোগ কিংবা জানাশোনা, বিশ্লেষণী যোগ্যতা অর্জন তাদের পক্ষে সম্ভবপর হয়ে ওঠে না।

এ সকল দর্শনের ক্ষেত্রে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি কি? ইসলামের সাথে দ্বান্দিক বিষয়গুলো কি?তা তারা জানেন না। ব্যক্তি, সমাজের দৃশ্যমান স্বার্থ- সুবিধা-উন্নতির মাপকাঠিতে দলগুলোকে বিচার করেন এবং নিজেদেরকে এর সাথে সম্পৃক্ত করেন। হয়তো তাদের চিন্তার জগতে এখনও এ বিষয়টি স্পষ্টরূপে ধরা পড়েনি বা কেউ ধরিয়ে দেয় নি যে, ষড়রিপু তাড়িত, স্বার্থপরতার দোষে দুষ্ট, সৃষ্টিকুলের অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যৎ ঘটনা প্রবাহের সামষ্টিক ধারণা সম্পর্কে অজ্ঞ,ক্ষুদ্র জ্ঞানের অধিকারী মানুষের পক্ষে ব্যক্তি-সমাজ-রাষ্ট্রের স্থায়ী,টেকসই ও সার্বিকভাবে কল্যাণকর কোন ইজম, কোন নীতি-আদর্শ প্রণয়ন ত্রুটিপূর্ণ,অসজ্ঞতিপূর্ণ বা বলতে গেলে অসম্ভব।

যা হোক এ প্রসঙ্গ আজকে আমার আলোচ্য বিষয় নয়। অন্য কোনো সময়ে সুপ্রিয় পাঠকদের কাছে বিস্তারিতভাবে এবিষয়টি তুলে ধরার আশা রাখি।

আজকে দেশের মেজরিটি মানুষের বোধ-বিশ্বাসে দৃঢ়ভাবে গ্ৰথিত যে ইসলাম, আল্লাহ প্রণীত সমাজ-রাষ্ট্রের সার্বিক নিরাপত্তা-অগ্ৰগতির গ্ৰান্টিযুক্ত আদর্শ যে ইসলাম, সে ইসলামকে যারা রাষ্ট্রীয় মৌলনীতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চায়,আমি তাদেরি একজন হিসেবে এ দেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠার চিন্তাধারা, তার সম্ভাবনা, তার উদ্দেশ্য ও কর্মকৌশলগত পরিসুদ্ধিতা এবং তার স্বকীয়তা রক্ষার বিষয়ে ইসলামী ব্লকের দলগুলোর অবস্থান নিয়ে চলমান নিবন্ধে কিছু কথা বলার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।

ইসলামী ভাবধারার যে দলগুলো রয়েছে তার মধ্যে জাকের পার্টি,তরিকত ফেডারেশন, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট এর মতো দলগুলোকে পলিটিক্যাল দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে হয়তো রাজনৈতিক দল বলা যায় কিন্তু মূল ধারার ইসলামী স্কলারদের প্রায় সকলেই এদেরকে যথার্থ ইসলামী দল হিসেবে বিবেচনায় নেননি।কারণ, বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে এদের আকিদা-বিশ্বাস,ব্যক্তি ও সামষ্টিক পর্যায়ে নিজস্ব উদ্ভাবিত অভিনভ কিছু কার্যকলাপ, ইসলামী ফরযিয়াত ও গুরুত্বপূর্ণ সুন্নতে নববীয়াহ’র প্রতি প্রকাশ্য অনীহা ও তাচ্ছিল্য, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ভক্তির নামে মনগড়া চিন্তাধারা লালন ও তার বিকাশ, তাসাউফ-তাযকিয়া তথা মা’রেফাত ও তরিকতের নামে অভিনব রোসম-রেওয়াজের আবিষ্কার ও দলবদ্ধভাবে তা প্রতিপালন ইত্যাদিসহ তাদের এমন অনেক বিষয় আছে যা আমাদের মহামান্য শরীয়ত কোন ক্রমেই অনুমোদন করে না।

এ জন্যেই এদেশের সহীহ ধারার সব অঙ্গনের অভিজ্ঞ, মুহাক্কিক ওলামায়ে কেরাম, পীর-মাশায়েখ, ইসলামী চিন্তাবিদ ও স্কলারগন এ সব ফেরকাহধারী ও দরবারীদেরকে মূল ইসলামী স্রোতধারা থেকে বিচ্ছিন্ন ও পরিত্যাজ্য বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন। বিশ্বব্যাপী ইসলামের অন্যতম স্রেষ্ঠ মারকায দারুল উলুম দেওবন্দ (ভারত), মারকায আন-নাদওয়া,মিশরের জামেয়া আল-আযহার,মক্বা ও মদীনা ইউনির্ভাসিটি, রাবেতায়ে আল-আলম আল ইসলামীর ফেক্বাহ একাডেমী, পাকিস্তানের যুগস্রেষ্ঠ এবং বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের অনুসরণীয় ইসলামী ব্যক্তিত্ব মুফতি জাস্টিস তাকী উসমানী, পবিত্র হারামাইন শরীফাইনের শ্রদ্ধেয় খতিবগনসহ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের সকল বিশ্ববরেণ্য ওলামায়ে কেরাম এবং দেশীয় পরিমন্ডলে নির্ভরযোগ্য ও জনসাধারণের আস্থারস্থল সকল ফতোয়ার কেন্দ্রগুলো যেমন —চট্রগ্রামের দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী,মেখল,পটিয়া ও জিরি মাদ্রাসা,ঢাকার যাত্রাবাড়ী, বসুন্ধরা, লালবাগ,জামিয়া রহমানিয়া,গওহারডাঙ্গার মুফতিগন ও তাবলিগ জামাতের শীর্ষস্থানীয় মুরব্বিরাসহ সারা দেশের সকল মুহাক্বিক ওলামায়ে কেরাম এবং দেশের গণমানুষের সর্বজন শ্রদ্ধেয় মাশায়েখগন — যেমন চরমোনাই, ছারছীনা,উজানী,জৌনপুর,ফুরফুরা,গওহারডাঙ্গা,ঢালকানগর,বাহাদুরপুর, ফুলতলী, শাহতলী,বায়তুশ শরফ,মৌকরা,কেওড়াবুনিয়া, নেছারাবাদ, কারীমপুর, খুলনা,মোড়লগঞ্জ,মোকামিয়া,পাংগাসিয়া,চলাভাঙ্গা দরবারের মাশায়েখগনসহ সারা দেশের সকল হক্বানী রব্বানী মাশায়েখে তরীকতগন আলোচ্য ওই সব দল, তাদের দরবার এবং তাদের কার্যক্রম সম্পর্কে অভিন্ন নেতিবাচক মনোভাব ব্যক্ত করেছেন। সাথে সাথে তাদের ঈমান বিধ্বংসী কার্যক্রম থেকে সযত্নে দূরে থাকার জন্যে সর্বশ্রেনির মুসলমানদের সতর্ক করেছেন।

এদের মধ্যে তরিকত ফেডারেশন ও জাকের পার্টি অন্যভাষায় মাইজভান্ডারী ও আটরশীর তথাকথিত পীর ও তাদের ভক্তরা পীরপুজা , মাজারপুজা,ওরশের নামে নারী-পুরুষের সম্মিলিত বেলেল্লাপনা, বিড়ি-সিগারেট-গাজার মাধ্যমে আসর মাতানো,নামাজ-হজ্জ-পর্দার মত গুরুত্বপূর্ণ ফরযকে অবহেলা করা,প্রিয় নবীর তাকীদকৃত সুন্নতকে পরিত্যাগ করা সহ ইসলামের মৌলিক অনেক বিধিনিষেধকে অবলীলায় অমান্য করে।

এরাই তরিকত ও মা’রেফতের নামে এমন সব কর্মকান্ড,রোসম-রেওয়াজ চালু করেছে যা ইসলামী শরিয়াহ আদৌ অনুমোদন করে না।এমনকি তাদের এহেন গর্হিত কার্যক্রম এতদূর পর্যন্ত যায় যে, শরীয়তের দৃষ্টিতে তা শিরক ও কুফরের পর্যায় পড়ে।

যে সমস্ত মানুষ ইলমুল ইহসান,ইলমে তাসাউফের মতো ইসলামের অন্যতম মৌলিক শিক্ষার ফরযিয়াতকে অস্বীকার করে তারা এ সমস্ত পথভ্রষ্ট, তথাকথিত তরিকাত ওয়ালা,বেদয়াতীদের কারনেই কথা বলার বাড়তি সুযোগ পেয়েছে। এদেরকে রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করেই জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা সাইয়্যেদ আবুল আ’লা মওদূদী সাহেব হক্ব-নাহক্ব বিচার না করে ঢালাও ভাবে সোহবতে আহলুল্লাহর মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তথা পীর-মুরীদীকে না-জায়েয, বেদয়াত ও আরো আরো—– ইত্যাদি অবান্তর কথাবার্তা বলেছেন।তার কথায় মনে হয়েছে মাথায় উকুন লেগেছে তো ঔষধ লাগানোর প্রয়োজন নেই,শরীর থেকে মাথাটাই কেটে আলাদা করে ফেলে দাও।

বস্তুত:এদের সাথে ইসলামের বুনিয়াদি শিক্ষা ইলমে তাসাউফ ও তরিকাতে তাযকিয়ার কোন সম্পর্ক নেই। কারণ ইলমে তাসাউফ ও ইলমে তরিকতের ধারনা এবং এর উৎপত্তি পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহ থেকেই হয়েছে এবং এর যাবতীয় নিয়মাবলীর ভিত্তি কোরআন-সুন্নাহর ওপরেই প্রতিষ্ঠিত। কোরআনের ভাষায় এটিকে তাযকিয়া এবং হাদীসে নববীর ভাষায় ইহসান বলা হয়েছে। এর ভিত্তি সম্পর্কে তাসাউফ শাস্ত্রের ইমাম আরেফ বিল্লাহ হযরত কুতুবুদ্দিন দামেস্কি সোহরাওয়ার্দী রহঃ তাঁর বিখ্যাত “রেসালাতে মক্বিয়া” কিতাবে লিখেছেন—”তরিকতের প্রথম স্তর হচ্ছে সার্বক্ষণিক শরীয়তের পূর্ণ অনুসরণ ও তৎকর্তৃক অবধারিত বিধি-বিধান পালনের মাধ্যমে সদা আল্লাহর রেযামন্দি ও সন্তুষ্টি অন্বেষণ করা।” হযরত সোহায়েল তস্তুরী রহ,-এর মতে,তরীকতের মৌলিক বিষয় সাতটি; তার মধ্যে অন্যতম হলো:—কিতাবুল্লাহকে শক্তভাবে ধারন করা,সুন্নতে নববীর অনুসরণ করা, গুনাহ পরিহার করা,হালাল খাদ্য গ্ৰহন করা। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে তরীকতের নামে মনগড়া যা-তা করার কোনো সুযোগ নেই অপরদিকে কোনো প্রকার ছলছুতোয় এর গুরুত্বকে অস্বীকার করারও কারো জন্যে কোনো অবকাশ নেই।

এ প্রসঙ্গটি আজকে আমার মূল আলোচনার বিষয় নয় বিধায় এ নিয়ে কথা আর দীর্ঘ না করে মূল প্রসঙ্গের বাকী অংশে ফিরে আসি। বিভক্ত ইসলামিক ফ্রন্টের দুগ্ৰুপই মূলতঃ চট্রগ্রামকেন্দ্রিক আঞ্চলিক দল। রাজধানী ঢাকায় এদের কিছু লোক থাকলেও বাকী সারা দেশে সাংগঠনিক ভাবে এদের কোন অস্তিত্ব নেই। এরাও মাজার ভক্ত। নিজেদেরকে সুন্নী বলে দাবি করে অথচ কাজ করে সব বেদয়াতীএবং সকল দেওবন্দী হক্বানী ওলামা মাশায়েখদেরকে ওহাবী বলে গালি দেয়।রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ভালোবাসা ও ভক্তির নামে শরীয়ত বহির্ভূত অনেক রোসম-রেওয়াজ পালন করে। মিলাদের মজলিসে রাসূল সাঃ এসে বসবেন—এমন আকিদা ও বিশ্বাসে ওই মজলিসে তারা চেয়ার সাজিয়ে রাখেন বলেও শোনা যায়।

অতএব,বাংলাদেশের ইসলামপ্রিয় তৌহিদী জনতার মূল স্রোতধারাসহ আপামর জনসাধারণকে ইসলামের আলোকে নেতৃত্ব দেয়া,এর প্রতিনিধিত্ব করা এ সব দলের পক্ষে অসম্ভব।উপরন্ত এদেশের তাওহীদবাদী আমজনতার মূল ধারার সাথে সামগ্ৰিকভাবে মিশতে পারাটাই এদের জন্যে বড় চ্যালেঞ্জ।

আগামীতে যদি এরা নিজেদেরকে পরিশুদ্ধ করে, কোরআন-সুন্নাহর আলোকে নিজেদের আকিদা-বিশ্বাস, কর্মপন্থা-কর্মকৌশল ধুয়ে মুছে সাফ করে নেয়, হক্বানী ওলামা- মাশায়েখদের বিশাল জামাতের পক্ষ থেকে পরিশুদ্ধিতার ঘোষণা আদায়ে সক্ষম হয়—তখনি তারা এদেশের মূলধারায় ফিরতে পারবে এবং জনগণও তাদের নিয়ে নূতন করে ভাবতে শুরু করবে। আল্লাহ তাদেরকে তাওফীক দিন।

ওপরে আলোচিত এ দল চারটি বাদে দেশে চলমান নিবন্ধিত ০৮ টি এবং এর বাইরেও উল্লেখ করার মতো যে কিছু ইসলামী দল রয়েছে, তার ২/১ টি ছাড়া বাকি সবগুলোকেই সার্বিক বিবেচনায় উম্মাহর মূলধারার সাথে যুক্ত ও সম্পৃক্ত বলে ইসলামী সব মহল থেকে বিবেচনা করা হয়। যদিও এ সব দলগুলোর মাঝে চিন্তার ভিন্নতা, দৃষ্টি ভঙ্গির ভিন্নতা এবং কর্মসূচি, কর্মকৌশল ও কর্মপদ্ধতিগত পার্থক্য রয়েছে।

আমি এখানে প্রধানত নিবন্ধিত ০৮ টি ইসলামী দলের পর্যালোচনাই করবো। বাকীদের আলোচনা প্রসঙ্গক্রমে হয়তো আসবে। পর্যালোচনায় যাওয়ার আগে এ দলগুলোর প্রতি আমি কিছুটা অনুসন্ধানী দৃষ্টি দিয়ে ছিলাম, এদের সম্পর্কে রাজনৈতিক চিন্তাশীল ব্যক্তিবর্গের মূল্যায়ন জানতে চেষ্টা করেছিলাম।অনুসন্ধানে যতটুকু জানতে পেরেছি তা হলো—বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে যারা চিন্তা-ভাবনা করেন, এর গতিধারা নিয়ে যারা গবেষণা করেন এমন অনেক বিশ্লেষকরাই বর্তমানে দেশের সবচেয়ে প্রাভাবশালী বৃহৎ ইসলামী রাজনৈতিক দল হিসেবে পীর সাহেব চরমোনাই- এর নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশকে চিহ্নিত করেছেন।

এ কথাটা এমনভাবে বলায় কেউ কেউ হয়তো পক্ষপাতের দোষারোপ করতে পারেন, রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের সাথে ভিন্নমত পোষণ করতে পারেন,অন্য কোনো ইসলামী দলকে প্রধান্যও দিতে পারেন। হ্যা! সে অভিমত রাখার অধিকার আপনার আছে। তবে সে ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট কিছু মাপকাঠি অবশ্যই আপনার কাছে থাকতে হবে। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশকে প্রধান ইসলামী দল হিসেবে বিবেচনার ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ মহল বেশ কয়েকটি সূচকের কথা উল্লেখ করেছেন— সেখানে অন্যান্য ইসলামী দলগুলোর স্কোর ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের তুলনায় অনেক নীচে অথবা কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রায় শূন্যের কোঠায়। সূচক গুলো হলো—

(এক) সুবিস্তৃত মজবুত সংগঠন ঃ যে কোন সংগঠনকে মূল্যায়ন করা হয় তার সাংগঠনিক বিস্তৃতি,সম্প্রসারন ও মজবুতি অর্জনের ওপর। এ দৃষ্টিতে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম,ইসলামী ঐক্যজোট (০৩ গ্ৰুপ), খেলাফত মজলিস (০২গ্ৰুপ),খেলাফত আন্দোলনের মত দলগুলোর ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, থানা/উপজেলার কথা বাদ,৬৪জেলার সবগুলোতে জেলা কমিটিই নেই। সব জেলায় নেই বসার মত অফিস। মূলতঃ অধ্যক্ষ মাওলানা ইসহাক সাহেবের নেতৃত্বাধীন খেলাফত মজলিস বাদে অন্যান্য ইসলামী দলগুলোর সাংগঠনিক বিস্তৃতি শুধু কিছু কওমী মাদ্রাসা কেন্দ্রিক।এর বাইরে তাদের কোন অবস্থান নেই।এটাই বাস্তবতা।আর অধ্যক্ষ মাওলানা ইসহাক সাহেবের খেলাফত মজলিসে আহমেদ আব্দুল কাদেরের নেতৃত্বে জামায়াত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আসা যুবশিবিরের অংশটি সংযুক্ত থাকায় কওমী অঙ্গনের বাইরে এদের কিছু লোক দেখা যায়। তবে কওমীদের উপস্থিতি এখানে আবার কম।বর্তমান ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব অধ্যাপক জাহাঙ্গীর হোসাইনসহ যুব শিবিরের ওই অংশটিই মূলত এ দলটির নেতৃত্বে রয়েছে।দেওবন্দী চিন্তার ধারক শায়খুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হক ও সিলেটের অধ্যক্ষ মাওলানা হাবিবুর রহমানের সাথে জামায়াত ঘরানার অধ্যাপক আহমদ আবদুল কাদেরদের চিন্তা-চেতনা ও কর্মধারার পার্থক্যের কারনেই ভাঙ্গনের কবলে পড়ে ছোট্র মজলিস। অতঃপর দ্বি-ধারায়,ত্রি-ধারায় বিভক্ত হয়ে আরো ছোট হয়ে যায় এবং নির্দিষ্ট সীমানায় আটকে পড়ে।

অপরদিকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের রয়েছে সারা দেশব্যাপী জালের মতো সুবিস্তৃত ও মজবুত সংগঠন। যেখানে অন্যান্য ইসলামী সংগঠন গুলোর সকল জেলায় কমিটি নেই, অফিস নেই—সেখানে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিটি কর্পোরেশন ও সাংগঠনিক জেলা সহ মোট ৮৭টি জেলায়,৬৫০টি থানা/উপজেলার সবগুলোতে,৩৩০টি পৌরসভার ৩৩০টিতেই এবং ৪৬৫০টি ইউনিয়নের দু-চারটি ব্যতিক্রম ছাড়া সবকটিতেই কমিটি রয়েছে। এমনকি অধিকাংশ এলাকায় তৃণমূল পর্যায়ে ৮০ থেকে ৯০ ভাগ ইউপি ওয়ার্ডেও শক্ত কমিটি দাড় করাতে সক্ষম হয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। সদ্য সমাপ্ত ইউপি নির্বাচনে সরকার দলীয় তান্ডবের মধ্যেও ইসলামী আন্দোলন সমর্থিত বেশ কয়েকজন মেম্বার প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন।এটা সকলকে রূটলেভেল বা ওয়ার্ড পর্যায়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের শক্তিশালী সাংগঠনিক উপস্থিতিরই জানান দেয়। সাংগঠনিক এ শক্তি শুধু ইসলামী দলই নয়,দেশের প্রধান দুটি দল বিএনপি-আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কোন রাজনৈতিক দলেরই নেই। এমনকি জাতীয় পার্টিরো নেই। এটা মৌখিক কথা নয়, তথ্য ভিত্তিক প্রমানিত বিষয়।

দেশের বাইরে বহির্বিশ্বেও রয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ – এর শাখা । আমেরিকা, ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও পূর্ব এশিয়ার মুসলিম দেশগুলো সহ বিশ্বের অনেক দেশেই প্রবাসী বাংলাদেশীরা ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর সদস্য/কর্মী হিসেবে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ওইসব দেশে ইসলামী আন্দোলনের সেন্ট্রাল ও শাখা কমিটি রয়েছে এবং ঢাকা থেকে কেন্দ্রীয় কমিটি এগুলোকে নিয়ন্ত্রন করছে।

মূল দলের পাশাপাশি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের রয়েছে অর্ধডজনেরও বেশী সহযোগী সংগঠন। দেশের গর্বিত সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে গঠিত হয়েছে ইসলামী মুক্তিযুদ্ধা পরিষদ। সুপ্রিমকোর্টের এক ঝাঁক তুখোড় আইনজীবীদের নেতৃত্বে গঠিত হয়েছে ইসলামী আইনজীবী পরিষদ। কৃষক শ্রমিক মেহনতি মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ইসলামী শ্রমিক আন্দোলন। দেশের বড় বড় পাটকল,বস্ত্রকলগুলো সরকার কর্তৃক বন্ধ করে দেয়ার আগ পর্যন্ত সেখানে শ্রমিকদের মাঝে ইসলামী শ্রমিক আন্দোলন বিশাল প্রভাব ফেলেছিলো। শ্রমিক ফেডারেশনের নির্বাচনে ইসলামী শ্রমিক আন্দোলন অংশগ্ৰহণ করে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। বর্তমানে শ্রমিকদের সব সেক্টরেই শ্রমিক আন্দোলন কাজ করছে। ছাত্র আন্দোলন, যুব আন্দোলন সহ সব সংগঠনের প্রতিটিরই আবার তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত কমিটি রয়েছে। প্রাচ্যের অক্সফোর্ডখ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে রয়েছে ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলনের শক্ত অবস্থান। এমনকি মালয়েশিয়ার ইউনিভার্সিটিতে ভিপি পদে দ্বিতীয় বারের মতো নির্বাচিত হয়েছে ছাত্র আন্দোলনেরই এক গর্বিত সন্তান।

(দুই) বিশাল কর্মী বাহিনী ঃ স্তরভিত্তিক দক্ষ নেতৃত্ব এবং নিবেদিতপ্রাণ কর্মী বাহিনী সকল সংগঠনেরই প্রাণশক্তি।

 

এ প্রাণশক্তি কার কতটুকু তা প্রত্যেকটি দল সম্পর্কে একটু খোঁজ খবর নিলেই যে কোনো অনুসন্ধিৎসু ব্যক্তির কাছে তা স্পষ্ট হয়ে ওঠবে। ইসলামী দলগুলো নিয়ে বস্তুনিষ্ঠভাবে অনুসন্ধান চালালে আমার মন্তব্যের সাথে আপনারা কেউ দ্বি-মত পোষণ করবেন বলে মনে হয় না। আসলেই কওমি মাদ্রাসার কিছু ছাত্র ছাড়া আলোচিত ইসলামী দলগুলোর বহিরাঙ্গনে কোনো কর্মী নেই। অবস্থা অনেকটা এ রকম যে, মাদ্রাসার মুহতামিম বা মুফতি সাহেব দলের বড় নেতা আর ছাত্ররা তার কর্মী। মাদ্রাসা বন্ধ থাকলে তারা কোন কর্মসূচি দিতে পারে না, দিলেও সফল হয়ন। দেশের বহুল প্রচারিত বেসরকারি Tv Channel News 24-এর অনুসন্ধানী সরেজমিন সচিত্র প্রতিবেদনে বিষয়টি বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে এবং অনুষ্ঠানের দর্শক মহল দেখেছেন— সেখানে প্রদত্ত সাক্ষাৎকারে ইসলামী ঐক্যজোটের নেতা জনাব মুফতি ফয়জুল্লাহ সাহেবও বিষয়টি প্রকারন্তরে স্বীকার করেছেন।

তবে দেশের বামপন্থী যে কোনো রাজ- – নৈতিক দলের চেয়ে এসব ইসলামী দলের অবস্থান ভালো । ইনু সাহেবদের জোট বামধারার ১১দল এবং এর বাইরে যারা আছেন সামগ্ৰিকভাবে তাদের মূল চালিকাশক্তি তো কলেজ-ইউনিভার্সিটির গুটিকয়েক ছাত্র-ছাত্রী। শিক্ষা সমাপনান্তে এরা যখন সমাজ জীবনের নানাক্ষেত্রে অবস্থান করে,তখন এরাই দলের একমাত্র সম্বল হিসেবে বিবেচিত হয়। এরাই কয়েকজন একত্রিত হয়ে রাজপথে শ্লোগান তুলে রাজনৈতিক অঙ্গনে সমাজতন্ত্রের অস্তিত্বের জানান দেয়। অবশ্য চীন-রাশিয়ার মত বিদেশি প্রভুদের কারনে এরা মিডিয়া জগতে খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে এবং সংবাদ কভারেজ পায়। ১০/১২ জন ছেলে-মেয়ে সামনে নিয়ে এরা এমন ভলিউমে বক্তব্য দেয়—মনে হয় যেন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে লক্ষ জনতার সামনে ঐতিহাসিক ভাষণ চলতেছে।

এসব বাম এবং আলোচিত ইসলামী দলগুলোর কর্মীদের অবস্থা, তাদের সংখ্যার সাথে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কর্মীদের পর্যালোচনায় নিলে যে কারো কাছেই ব্যবধানটা বড় স্পষ্টভাবেই ফুটে ওঠবে।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের রয়েছে মাঠপর্যায়ে স্তর ভিত্তিক দক্ষ নেতৃত্ব ও নিবেদিত প্রাণ বিশাল কর্মী বাহিনী। তৃণমূলের ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, থানা/উপজেলায় মূলদল এবং সহযোগী সংগঠনগুলো মিলিয়ে শত শত নিবেদিত কর্মী রয়েছে দলটির।এসব কর্মী নির্দিষ্ট কোনো শ্রেনি-পেশা থেকে নয়, বরং সমাজজীবনে বিরাজমান সব শ্রেনি-পেশার,সব স্তরের গণমানুষের প্রতিনিধিত্ব এখানে রয়েছে। এখানে যেমন আছে মাঠের কৃষক, কারখানার শ্রমিক, পরিবহন শ্রমিক,রিক্সা-ভ্যান চালক, জেলে, তাঁতী,কামার,কুমার সহ প্রান্তিক পর্যায়ের খেটে খাওয়া মহেনতি মানুষ— তেমনি আছে প্রাইমারী থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত,মক্তব থেকে দাওরা-তাকমিল পর্যন্ত সাধারণশিক্ষা -আলিয়া- কওমিয়া এ তৃ-ধারারই ছাত্র-শিক্ষক ও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদগণ। আছে ব্যবসায়ী, বিশেষজ্ঞ ডাক্তার, সুপ্রিমকোর্টসহ বিভিন্ন বারের বিশিষ্ট আইনজীবী, চাকরিজীবী, অবসরপ্রাপ্ত সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ। আছে উম্মাহর রাহবার

দেশবরেণ্য সর্বজন শ্রদ্ধেয় ওলামা মাশায়েখ এবং প্রথিতযশা ইসলামী চিন্তাবিদ ও বুদ্ধিজীবী গণ। এক কথায় দেশের সকল শ্রেনি- পেশাধারী গণ মানুষেরই প্রতিনিধিত্ব রয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কর্মী বাহিনীতে এবং সারা দেশব্যাপী তাদের সংখ্যা লাখ লাখ।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৮ সালের ০৫ অক্টোবর ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ রাজধানী ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় মহাসমাবেশ করেছিল। সংসদ ভেঙে নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আহুত এ মহাসমাবেশ ছিল সাম্প্রতিক কালে রাজনৈতিক দলগুলোর ডাকা সবচেয়ে বড় দুটি মহাসমাবেশের একটি এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর স্মরণকালের শ্রেষ্ঠ সমাবেশ। এর কয়েকদিন আগে প্রধান বিরোধী দল বিএনপিও একই জায়গায়,একই দাবিতে মহাসমাবেশ করেছিল। বিএনপির তুলনায় ইসলামী আন্দোলনের সমাবেশের আকার এবং দলীয় নেতা-কর্মীদের উপস্থিতি কোন ক্রমেই কম ছিলনা। BBC, Voice of America,CNN, আল-জাজিরা, রেডিও তেহরান সহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের গণমাধ্যম গুলো অত্যান্ত গুরুত্বের সাথে মহাসমাবেশের সব নিউজ প্রচার করেছে। তাদের ভাষ্যমতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান কানায় কানায় ভরে গিয়ে ইঞ্জিনিয়ার ইনস্টিটিউট পর্যন্ত উপসে পড়েছিল ইসলামী আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের ভীর। পর্যবেক্ষকদের দৃষ্টিতে এ বিশাল কর্মীবাহিনী ও সাংগঠনিক শক্তি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশকে একক বিকল্প তৃতীয় ধারা হিসেবে দাঁড় করিয়েছে। প্রথিতজশা লেখক, গবেষক মহিউদ্দিন আহমেদ, রাজনৈতিক বিশ্লেষক নবনিতা চৌধুরীসহ অনেকেই স্পষ্টত এ রকমটি মন্তব্য করেছেন।

বিশাল এ কর্মীবাহিনীকে কমিটি- কাঠামোর আওতায় সুশৃঙ্খল ভাবে পরিচালনা করতে গিয়ে ওয়ার্ড, ইউনিয়ন,থানা/উপজেলা, পৌরসভা, জেলা/মহানগর ও সংসদীয় এলাকায় ইসলামী আন্দোলনের স্তরভিত্তিক দক্ষ নেতৃত্বও গড়ে উঠেছে এবং ক্রমেই এ নেতৃত্বের গুণগতমান ও সংখ্যা দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে। DBC Television এর রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের চোখেও বিষয়টি ধরা পড়েছে। তারা মন্তব্য করেছেন,”বিগত২০০৮ সালের ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যেখানে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ অর্ধেক আসনে প্রার্থী দিতে পেরেছিল — সেখানে ২০১৮তে এসে তারা এককভাবে ২৯৯ আসনেই দলীয় প্রার্থী দেয়ার মতো সক্ষমতা অর্জন করেছে।” আমার জানা মতে বাকী০১টি— যশোর-০৩ আসনেও ইসলামী আন্দোলন প্রার্থী দিয়েছিল কিন্তু আইনী জটিলতা সৃষ্টি হওয়ায় সেটি বাতিল হয়ে যায়। অঞ্চল ভিত্তিক মানসম্পন্ন নেতৃত্ব সৃষ্টির ক্ষেত্রে ইসলামী আন্দোলনের এটা একটি বিরাট অগ্ৰগতি হিসেবে সচেতন মহলের যে কারো কাছেই বিবেচিত হবে।

পাশাপাশি পাঁচ বছর আগে বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলটি দু’হাজারের কাছাকাছি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রার্থী দিতে পেরেছিল। পাঁচ বছরে তৃণমূল পর্যায়ে নতুন কর্মী-সমর্থক বৃদ্ধি পেয়েছে। সেখান থেকে সৃষ্টি হয়েছে নির্বাচনী লড়াইয়ে নামার মানসিকতাপূর্ণ নতুন নেতৃত্বের। যতদূর জানা গেছে তাতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এবারের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ৪৬০০টি ইউনিয়নে দলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থী দেয়ার টার্গেট নিয়ে কাজ করছে। লক্ষ্যমাত্রার শতভাগ না হোক,যদি ৮০ ভাগ বা তার কাছাকাছিও পূরন করা যায়, তবে এটা হবে ইসলামী আন্দোলনের জন্যে বিরাট একটা অর্জন,মাইল ফলক ছোঁয়ার মত একটা অগ্ৰগতি।

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন-২০২১ এর সদ্য সমাপ্ত ১ম ধাপের নির্বাচন গত ২১জুন হয়ে গেল। ১ম ধাপের নির্বাচনের মূল চাপ প্রধানত দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ- পশ্চিমাঞ্চল তথা বরিশাল ও খুলনা বিভাগে ছিল। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ শতভাগ প্রার্থী নিশ্চিত করে নির্বাচনী মাঠে নামে। কিন্তু আওয়ামী লীগের স্থানীয় ক্যাডার বাহিনী প্রকাশ্য ভয়-ভীতি প্রদর্শন, সশস্ত্র মহড়া, প্রান নাশের হুমকি, মনোনয়নপত্র ছিনতাইসহ ভয়াবহ ত্রাস সৃষ্টির মাধ্যমে অনেক জায়গায়ই ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থীদেরকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে দেয়নি। যেখানে পরিস্থিতি তুলনামূলক একটুকম ভয়াবহ ছিল কিংবা কোন কৌশলের আশ্রয় নিয়ে মনোনয়নপত্র দাখিলের সুযোগ পেয়েছে সেখানেই ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র দাখিল করেছে।

প্রচারণা শুরুর কয়েক দিন পরেই করোনা মহামারীর ভয়াবহতা বৃদ্ধি পেলে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক নির্বাচন স্থাগিত হয়ে যায়। বরিশাল বিভাগের পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে শুধু এই বিভাগেই ২১জুন ভোটগ্ৰহন অনুষ্ঠিত হয়। আওয়ামী লীগের এতো সন্ত্রাসী তান্ডবের পরেও বরিশাল বিভাগে প্রথমধাপের ১৭২টি ইউনিয়নের মধ্যে

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ১১৯ টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রার্থী দিতে সক্ষম হয়। এর অর্থ আওয়ামী লীগ, বিএনপির সমান্তরালে তৃণমূলে ইসলামী আন্দোলনেরও যোগ্য কর্মী ও দক্ষ নেতৃত্ব সৃষ্টি হচ্ছে এবং তাদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে যা ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশকে একক তৃতীয় শক্তির পর্যায় নিয়ে গেছে।আগামীতে সকল ধরনের নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ দলীয় প্রার্থী দিতে সক্ষম ইনশাআল্লাহ।

(চলবে)

 

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

মির্জাগঞ্জে রাতের আধারে বসতঘর লুটপাট

বাংলাদেশের রাজনিতীতে নিজস্ব স্বকীয়তায় পথ চলছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ

আপডেট টাইম : ০৭:১৭:৫৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৯ জুলাই ২০২১

মু.হুমায়ুন কবির,বিশেষ প্রতিনিধি

 

নিবন্ধনের ক্রমানুযায়ী বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল সমূহের সংখ্যা ৪৪টি। অবশ্য নির্বাচন কমিশন ইতোপূর্বে বিভিন্ন কারণে পাঁচটি দলের নিবন্ধন বাতিল করেছে। প্রথমেই সংশোধিত গঠনতন্ত্র জমা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় ২০১০সালে ০৩৯ নং ক্রমিকে নিবন্ধিত কর্নেল ফারুক-রশীদের রাজনৈতিক দল ফ্রিডম পার্টির নিবন্ধন বাতিল হয়। এরপর ২০১৮ সালের ০৪ অক্টোবর শর্ত পূরণ করতে না পারায় বাতিল করা হয় কাজী ফারুকের ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলনের নিবন্ধন (নিবন্ধন নং-০২৯)। তালিকার ০১৪ নং ক্রমিকে থাকা বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন ২০১৩ সালে উচ্চ আদালতের এক আদেশে স্থাগিত হয় এবং ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর স্থায়ীভাবে বাতিল হয়ে যায়। বাতিল করা হয় তালিকার ০২৯ নং ক্রমিকে থাকা প্রগ্ৰেসিভ ডেমোক্রেটিভ পার্টি (PDP)’র নিবন্ধন। সর্বশেষ ২০২১সালের ০১ ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন কমিশনের এক প্রজ্ঞাপনে বাতিল করা হয় প্রয়াত শফিউল আলম প্রধানের দল জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি জাগপার নিবন্ধন।এ পাঁচটি দলকে হিসেবের বাইরে রাখার পর বর্তমানে দেশে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৯ টিতে।

এ ৩৯ টি দলের মধ্যে ইসলামী দল আছে ১২ টি। দলগুলো হলো— ১.চরমোনাই’র হযরত পীর সাহেব হুজুরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ২.প্রিন্সিপ্যাল মাওলানা মুহাম্মাদ হাবিবুর রহমানের বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ৩.হাফেজ মাওলানা আতাউল্লাহ হাফেজ্জীর নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন ৪.অধ্যক্ষ মাওলানা মোঃ ইসহাকের নেতৃত্বাধীন খেলাফত মজলিস ৫.আবদুল মু’মিন ও নূর হোসাইন কাসেমীর নেতৃত্বাধীন জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম ৬.আঃ লতিফ নেজামীর ইসলামী ঐক্যজোট ৭.আটরশী পীরের জাকের পার্টি ৮.কামরুজ্জামান খানের বাংলাদেশের মুসলিম লীগ (বিএম এল) ৯.সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারীর বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন ১০.বেগম জোবেদা কাদের চৌধুরীর মুসলিম লীগ ১১.সৈয়দ বাহাদুর শাহ-এর ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ এবং ১২.এম এ মান্নানের বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট। অনিবন্ধিত জামায়াত, নিজামে ইসলাম এবং মিসবাহুর রহমানের নেতৃত্বাধীন ইসলামী ঐক্যজোটের অংশটিকে গণনায় নিলে এ সংখ্যা এসে দাঁড়ায় ১৫টিতে।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক মাঠে বিচরণকারী সব ঘরানার নিবন্ধিত-অনিবন্ধিত এ সব রাজনৈতিক দলের নীতি-আদর্শ, লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের প্রতি একটু গভীর ভাবে দৃষ্টি দিলে দেখা যাবে যে,প্রায় অর্ধশত রাজনৈতিক দলের বিশাল বহরটা মোটামুটি তিনটি ব্লকে বিভাজিত। (০১)ডানপন্থী ব্লকঃ এ ব্লকে রয়েছে বিএনপি, জাতীয় পার্টি, বিজেপি,জেপি,জাগপা, বিকল্পধারা, কল্যাণ পার্টি,বিএন এফ, এলডিপি, এনপিপি এনডিএমসহ সমমনা দলগুলো।

(০২) বামপন্থী বা বামপন্থা দ্বারা প্রভাবিত স্যেকুলার ব্লকঃ এ ব্লকে রয়েছে আওয়ামী লীগ, গণফোরাম, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ,ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি,জাসদ,বাসদ, কমিউনিস্ট পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টি,গণ আজাদী পার্টি,ন্যাপ,সাম্যবাদী দল,জেএসডি গণফ্রন্ট ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি সহ সমমনা দল গুলো।

(০৩) ইসলামী ব্লকঃ এ ব্লকে রয়েছে ওপরে উল্লেখিত ১২ থেকে ১৫টি ইসলামী ভাবধারার দলগুলো।

এ দেশের সর্বস্তরের তৌহিদী জনতা যারা সত্যিকার অর্থে ইসলামকে ভালোবাসেন, বুকে লালন করেন,ধারন করেন আর এ ভালোবাসার কারনেই রাষ্ট্রীয় আদর্শ হিসেবে ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত দেখতে চান— তাদের কাছে ডান কিংবা বাম ধারার কোন রাজনীতিই গ্ৰহনযোগ্য নয়। কারন এ সব রাজনৈতিক দলের কোনোটিরই দলীয় ম্যানুফেষ্টে ইসলামকে রাষ্ট্রীয় আদর্শ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়নি বরং মানবীয় চিন্তা প্রসূত এমনসব দর্শনকে তারা দলীয় আদর্শ হিসেবে গ্ৰহন করেছে যা কোনো কোনো ক্ষেত্রে পুরোটাই আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে অংশ বিশেষ চরমভাবে ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক।

যে সকল মুসলিম ভাই-বোনেরা এসব দলের সাথে জড়িত আছেন তাদের কেউ কেউ হয়তো জেনে- বুঝেই এ সব দল করছেন। ওই সব নীতি-আদর্শের বাস্তবায়নই সমাজ-দেশ-জাতির মুক্তি, উন্নতি ও অগ্রগতির একমাত্র উপায় — এমন বিশ্বাসবোধ থেকেই তারা এ সব দলের ঘোর সমর্থক। কিন্তু অধিকাংশ মানুষই এসব দলের নীতি-আদর্শ ও বিশ্বাসবোধের গভীরতায় ঢুকেন না অথবা ঢোকার সুযোগ কিংবা জানাশোনা, বিশ্লেষণী যোগ্যতা অর্জন তাদের পক্ষে সম্ভবপর হয়ে ওঠে না।

এ সকল দর্শনের ক্ষেত্রে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি কি? ইসলামের সাথে দ্বান্দিক বিষয়গুলো কি?তা তারা জানেন না। ব্যক্তি, সমাজের দৃশ্যমান স্বার্থ- সুবিধা-উন্নতির মাপকাঠিতে দলগুলোকে বিচার করেন এবং নিজেদেরকে এর সাথে সম্পৃক্ত করেন। হয়তো তাদের চিন্তার জগতে এখনও এ বিষয়টি স্পষ্টরূপে ধরা পড়েনি বা কেউ ধরিয়ে দেয় নি যে, ষড়রিপু তাড়িত, স্বার্থপরতার দোষে দুষ্ট, সৃষ্টিকুলের অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যৎ ঘটনা প্রবাহের সামষ্টিক ধারণা সম্পর্কে অজ্ঞ,ক্ষুদ্র জ্ঞানের অধিকারী মানুষের পক্ষে ব্যক্তি-সমাজ-রাষ্ট্রের স্থায়ী,টেকসই ও সার্বিকভাবে কল্যাণকর কোন ইজম, কোন নীতি-আদর্শ প্রণয়ন ত্রুটিপূর্ণ,অসজ্ঞতিপূর্ণ বা বলতে গেলে অসম্ভব।

যা হোক এ প্রসঙ্গ আজকে আমার আলোচ্য বিষয় নয়। অন্য কোনো সময়ে সুপ্রিয় পাঠকদের কাছে বিস্তারিতভাবে এবিষয়টি তুলে ধরার আশা রাখি।

আজকে দেশের মেজরিটি মানুষের বোধ-বিশ্বাসে দৃঢ়ভাবে গ্ৰথিত যে ইসলাম, আল্লাহ প্রণীত সমাজ-রাষ্ট্রের সার্বিক নিরাপত্তা-অগ্ৰগতির গ্ৰান্টিযুক্ত আদর্শ যে ইসলাম, সে ইসলামকে যারা রাষ্ট্রীয় মৌলনীতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চায়,আমি তাদেরি একজন হিসেবে এ দেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠার চিন্তাধারা, তার সম্ভাবনা, তার উদ্দেশ্য ও কর্মকৌশলগত পরিসুদ্ধিতা এবং তার স্বকীয়তা রক্ষার বিষয়ে ইসলামী ব্লকের দলগুলোর অবস্থান নিয়ে চলমান নিবন্ধে কিছু কথা বলার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।

ইসলামী ভাবধারার যে দলগুলো রয়েছে তার মধ্যে জাকের পার্টি,তরিকত ফেডারেশন, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট এর মতো দলগুলোকে পলিটিক্যাল দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে হয়তো রাজনৈতিক দল বলা যায় কিন্তু মূল ধারার ইসলামী স্কলারদের প্রায় সকলেই এদেরকে যথার্থ ইসলামী দল হিসেবে বিবেচনায় নেননি।কারণ, বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে এদের আকিদা-বিশ্বাস,ব্যক্তি ও সামষ্টিক পর্যায়ে নিজস্ব উদ্ভাবিত অভিনভ কিছু কার্যকলাপ, ইসলামী ফরযিয়াত ও গুরুত্বপূর্ণ সুন্নতে নববীয়াহ’র প্রতি প্রকাশ্য অনীহা ও তাচ্ছিল্য, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ভক্তির নামে মনগড়া চিন্তাধারা লালন ও তার বিকাশ, তাসাউফ-তাযকিয়া তথা মা’রেফাত ও তরিকতের নামে অভিনব রোসম-রেওয়াজের আবিষ্কার ও দলবদ্ধভাবে তা প্রতিপালন ইত্যাদিসহ তাদের এমন অনেক বিষয় আছে যা আমাদের মহামান্য শরীয়ত কোন ক্রমেই অনুমোদন করে না।

এ জন্যেই এদেশের সহীহ ধারার সব অঙ্গনের অভিজ্ঞ, মুহাক্কিক ওলামায়ে কেরাম, পীর-মাশায়েখ, ইসলামী চিন্তাবিদ ও স্কলারগন এ সব ফেরকাহধারী ও দরবারীদেরকে মূল ইসলামী স্রোতধারা থেকে বিচ্ছিন্ন ও পরিত্যাজ্য বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন। বিশ্বব্যাপী ইসলামের অন্যতম স্রেষ্ঠ মারকায দারুল উলুম দেওবন্দ (ভারত), মারকায আন-নাদওয়া,মিশরের জামেয়া আল-আযহার,মক্বা ও মদীনা ইউনির্ভাসিটি, রাবেতায়ে আল-আলম আল ইসলামীর ফেক্বাহ একাডেমী, পাকিস্তানের যুগস্রেষ্ঠ এবং বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের অনুসরণীয় ইসলামী ব্যক্তিত্ব মুফতি জাস্টিস তাকী উসমানী, পবিত্র হারামাইন শরীফাইনের শ্রদ্ধেয় খতিবগনসহ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের সকল বিশ্ববরেণ্য ওলামায়ে কেরাম এবং দেশীয় পরিমন্ডলে নির্ভরযোগ্য ও জনসাধারণের আস্থারস্থল সকল ফতোয়ার কেন্দ্রগুলো যেমন —চট্রগ্রামের দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী,মেখল,পটিয়া ও জিরি মাদ্রাসা,ঢাকার যাত্রাবাড়ী, বসুন্ধরা, লালবাগ,জামিয়া রহমানিয়া,গওহারডাঙ্গার মুফতিগন ও তাবলিগ জামাতের শীর্ষস্থানীয় মুরব্বিরাসহ সারা দেশের সকল মুহাক্বিক ওলামায়ে কেরাম এবং দেশের গণমানুষের সর্বজন শ্রদ্ধেয় মাশায়েখগন — যেমন চরমোনাই, ছারছীনা,উজানী,জৌনপুর,ফুরফুরা,গওহারডাঙ্গা,ঢালকানগর,বাহাদুরপুর, ফুলতলী, শাহতলী,বায়তুশ শরফ,মৌকরা,কেওড়াবুনিয়া, নেছারাবাদ, কারীমপুর, খুলনা,মোড়লগঞ্জ,মোকামিয়া,পাংগাসিয়া,চলাভাঙ্গা দরবারের মাশায়েখগনসহ সারা দেশের সকল হক্বানী রব্বানী মাশায়েখে তরীকতগন আলোচ্য ওই সব দল, তাদের দরবার এবং তাদের কার্যক্রম সম্পর্কে অভিন্ন নেতিবাচক মনোভাব ব্যক্ত করেছেন। সাথে সাথে তাদের ঈমান বিধ্বংসী কার্যক্রম থেকে সযত্নে দূরে থাকার জন্যে সর্বশ্রেনির মুসলমানদের সতর্ক করেছেন।

এদের মধ্যে তরিকত ফেডারেশন ও জাকের পার্টি অন্যভাষায় মাইজভান্ডারী ও আটরশীর তথাকথিত পীর ও তাদের ভক্তরা পীরপুজা , মাজারপুজা,ওরশের নামে নারী-পুরুষের সম্মিলিত বেলেল্লাপনা, বিড়ি-সিগারেট-গাজার মাধ্যমে আসর মাতানো,নামাজ-হজ্জ-পর্দার মত গুরুত্বপূর্ণ ফরযকে অবহেলা করা,প্রিয় নবীর তাকীদকৃত সুন্নতকে পরিত্যাগ করা সহ ইসলামের মৌলিক অনেক বিধিনিষেধকে অবলীলায় অমান্য করে।

এরাই তরিকত ও মা’রেফতের নামে এমন সব কর্মকান্ড,রোসম-রেওয়াজ চালু করেছে যা ইসলামী শরিয়াহ আদৌ অনুমোদন করে না।এমনকি তাদের এহেন গর্হিত কার্যক্রম এতদূর পর্যন্ত যায় যে, শরীয়তের দৃষ্টিতে তা শিরক ও কুফরের পর্যায় পড়ে।

যে সমস্ত মানুষ ইলমুল ইহসান,ইলমে তাসাউফের মতো ইসলামের অন্যতম মৌলিক শিক্ষার ফরযিয়াতকে অস্বীকার করে তারা এ সমস্ত পথভ্রষ্ট, তথাকথিত তরিকাত ওয়ালা,বেদয়াতীদের কারনেই কথা বলার বাড়তি সুযোগ পেয়েছে। এদেরকে রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করেই জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা সাইয়্যেদ আবুল আ’লা মওদূদী সাহেব হক্ব-নাহক্ব বিচার না করে ঢালাও ভাবে সোহবতে আহলুল্লাহর মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তথা পীর-মুরীদীকে না-জায়েয, বেদয়াত ও আরো আরো—– ইত্যাদি অবান্তর কথাবার্তা বলেছেন।তার কথায় মনে হয়েছে মাথায় উকুন লেগেছে তো ঔষধ লাগানোর প্রয়োজন নেই,শরীর থেকে মাথাটাই কেটে আলাদা করে ফেলে দাও।

বস্তুত:এদের সাথে ইসলামের বুনিয়াদি শিক্ষা ইলমে তাসাউফ ও তরিকাতে তাযকিয়ার কোন সম্পর্ক নেই। কারণ ইলমে তাসাউফ ও ইলমে তরিকতের ধারনা এবং এর উৎপত্তি পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহ থেকেই হয়েছে এবং এর যাবতীয় নিয়মাবলীর ভিত্তি কোরআন-সুন্নাহর ওপরেই প্রতিষ্ঠিত। কোরআনের ভাষায় এটিকে তাযকিয়া এবং হাদীসে নববীর ভাষায় ইহসান বলা হয়েছে। এর ভিত্তি সম্পর্কে তাসাউফ শাস্ত্রের ইমাম আরেফ বিল্লাহ হযরত কুতুবুদ্দিন দামেস্কি সোহরাওয়ার্দী রহঃ তাঁর বিখ্যাত “রেসালাতে মক্বিয়া” কিতাবে লিখেছেন—”তরিকতের প্রথম স্তর হচ্ছে সার্বক্ষণিক শরীয়তের পূর্ণ অনুসরণ ও তৎকর্তৃক অবধারিত বিধি-বিধান পালনের মাধ্যমে সদা আল্লাহর রেযামন্দি ও সন্তুষ্টি অন্বেষণ করা।” হযরত সোহায়েল তস্তুরী রহ,-এর মতে,তরীকতের মৌলিক বিষয় সাতটি; তার মধ্যে অন্যতম হলো:—কিতাবুল্লাহকে শক্তভাবে ধারন করা,সুন্নতে নববীর অনুসরণ করা, গুনাহ পরিহার করা,হালাল খাদ্য গ্ৰহন করা। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে তরীকতের নামে মনগড়া যা-তা করার কোনো সুযোগ নেই অপরদিকে কোনো প্রকার ছলছুতোয় এর গুরুত্বকে অস্বীকার করারও কারো জন্যে কোনো অবকাশ নেই।

এ প্রসঙ্গটি আজকে আমার মূল আলোচনার বিষয় নয় বিধায় এ নিয়ে কথা আর দীর্ঘ না করে মূল প্রসঙ্গের বাকী অংশে ফিরে আসি। বিভক্ত ইসলামিক ফ্রন্টের দুগ্ৰুপই মূলতঃ চট্রগ্রামকেন্দ্রিক আঞ্চলিক দল। রাজধানী ঢাকায় এদের কিছু লোক থাকলেও বাকী সারা দেশে সাংগঠনিক ভাবে এদের কোন অস্তিত্ব নেই। এরাও মাজার ভক্ত। নিজেদেরকে সুন্নী বলে দাবি করে অথচ কাজ করে সব বেদয়াতীএবং সকল দেওবন্দী হক্বানী ওলামা মাশায়েখদেরকে ওহাবী বলে গালি দেয়।রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ভালোবাসা ও ভক্তির নামে শরীয়ত বহির্ভূত অনেক রোসম-রেওয়াজ পালন করে। মিলাদের মজলিসে রাসূল সাঃ এসে বসবেন—এমন আকিদা ও বিশ্বাসে ওই মজলিসে তারা চেয়ার সাজিয়ে রাখেন বলেও শোনা যায়।

অতএব,বাংলাদেশের ইসলামপ্রিয় তৌহিদী জনতার মূল স্রোতধারাসহ আপামর জনসাধারণকে ইসলামের আলোকে নেতৃত্ব দেয়া,এর প্রতিনিধিত্ব করা এ সব দলের পক্ষে অসম্ভব।উপরন্ত এদেশের তাওহীদবাদী আমজনতার মূল ধারার সাথে সামগ্ৰিকভাবে মিশতে পারাটাই এদের জন্যে বড় চ্যালেঞ্জ।

আগামীতে যদি এরা নিজেদেরকে পরিশুদ্ধ করে, কোরআন-সুন্নাহর আলোকে নিজেদের আকিদা-বিশ্বাস, কর্মপন্থা-কর্মকৌশল ধুয়ে মুছে সাফ করে নেয়, হক্বানী ওলামা- মাশায়েখদের বিশাল জামাতের পক্ষ থেকে পরিশুদ্ধিতার ঘোষণা আদায়ে সক্ষম হয়—তখনি তারা এদেশের মূলধারায় ফিরতে পারবে এবং জনগণও তাদের নিয়ে নূতন করে ভাবতে শুরু করবে। আল্লাহ তাদেরকে তাওফীক দিন।

ওপরে আলোচিত এ দল চারটি বাদে দেশে চলমান নিবন্ধিত ০৮ টি এবং এর বাইরেও উল্লেখ করার মতো যে কিছু ইসলামী দল রয়েছে, তার ২/১ টি ছাড়া বাকি সবগুলোকেই সার্বিক বিবেচনায় উম্মাহর মূলধারার সাথে যুক্ত ও সম্পৃক্ত বলে ইসলামী সব মহল থেকে বিবেচনা করা হয়। যদিও এ সব দলগুলোর মাঝে চিন্তার ভিন্নতা, দৃষ্টি ভঙ্গির ভিন্নতা এবং কর্মসূচি, কর্মকৌশল ও কর্মপদ্ধতিগত পার্থক্য রয়েছে।

আমি এখানে প্রধানত নিবন্ধিত ০৮ টি ইসলামী দলের পর্যালোচনাই করবো। বাকীদের আলোচনা প্রসঙ্গক্রমে হয়তো আসবে। পর্যালোচনায় যাওয়ার আগে এ দলগুলোর প্রতি আমি কিছুটা অনুসন্ধানী দৃষ্টি দিয়ে ছিলাম, এদের সম্পর্কে রাজনৈতিক চিন্তাশীল ব্যক্তিবর্গের মূল্যায়ন জানতে চেষ্টা করেছিলাম।অনুসন্ধানে যতটুকু জানতে পেরেছি তা হলো—বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে যারা চিন্তা-ভাবনা করেন, এর গতিধারা নিয়ে যারা গবেষণা করেন এমন অনেক বিশ্লেষকরাই বর্তমানে দেশের সবচেয়ে প্রাভাবশালী বৃহৎ ইসলামী রাজনৈতিক দল হিসেবে পীর সাহেব চরমোনাই- এর নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশকে চিহ্নিত করেছেন।

এ কথাটা এমনভাবে বলায় কেউ কেউ হয়তো পক্ষপাতের দোষারোপ করতে পারেন, রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের সাথে ভিন্নমত পোষণ করতে পারেন,অন্য কোনো ইসলামী দলকে প্রধান্যও দিতে পারেন। হ্যা! সে অভিমত রাখার অধিকার আপনার আছে। তবে সে ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট কিছু মাপকাঠি অবশ্যই আপনার কাছে থাকতে হবে। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশকে প্রধান ইসলামী দল হিসেবে বিবেচনার ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ মহল বেশ কয়েকটি সূচকের কথা উল্লেখ করেছেন— সেখানে অন্যান্য ইসলামী দলগুলোর স্কোর ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের তুলনায় অনেক নীচে অথবা কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রায় শূন্যের কোঠায়। সূচক গুলো হলো—

(এক) সুবিস্তৃত মজবুত সংগঠন ঃ যে কোন সংগঠনকে মূল্যায়ন করা হয় তার সাংগঠনিক বিস্তৃতি,সম্প্রসারন ও মজবুতি অর্জনের ওপর। এ দৃষ্টিতে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম,ইসলামী ঐক্যজোট (০৩ গ্ৰুপ), খেলাফত মজলিস (০২গ্ৰুপ),খেলাফত আন্দোলনের মত দলগুলোর ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, থানা/উপজেলার কথা বাদ,৬৪জেলার সবগুলোতে জেলা কমিটিই নেই। সব জেলায় নেই বসার মত অফিস। মূলতঃ অধ্যক্ষ মাওলানা ইসহাক সাহেবের নেতৃত্বাধীন খেলাফত মজলিস বাদে অন্যান্য ইসলামী দলগুলোর সাংগঠনিক বিস্তৃতি শুধু কিছু কওমী মাদ্রাসা কেন্দ্রিক।এর বাইরে তাদের কোন অবস্থান নেই।এটাই বাস্তবতা।আর অধ্যক্ষ মাওলানা ইসহাক সাহেবের খেলাফত মজলিসে আহমেদ আব্দুল কাদেরের নেতৃত্বে জামায়াত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আসা যুবশিবিরের অংশটি সংযুক্ত থাকায় কওমী অঙ্গনের বাইরে এদের কিছু লোক দেখা যায়। তবে কওমীদের উপস্থিতি এখানে আবার কম।বর্তমান ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব অধ্যাপক জাহাঙ্গীর হোসাইনসহ যুব শিবিরের ওই অংশটিই মূলত এ দলটির নেতৃত্বে রয়েছে।দেওবন্দী চিন্তার ধারক শায়খুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হক ও সিলেটের অধ্যক্ষ মাওলানা হাবিবুর রহমানের সাথে জামায়াত ঘরানার অধ্যাপক আহমদ আবদুল কাদেরদের চিন্তা-চেতনা ও কর্মধারার পার্থক্যের কারনেই ভাঙ্গনের কবলে পড়ে ছোট্র মজলিস। অতঃপর দ্বি-ধারায়,ত্রি-ধারায় বিভক্ত হয়ে আরো ছোট হয়ে যায় এবং নির্দিষ্ট সীমানায় আটকে পড়ে।

অপরদিকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের রয়েছে সারা দেশব্যাপী জালের মতো সুবিস্তৃত ও মজবুত সংগঠন। যেখানে অন্যান্য ইসলামী সংগঠন গুলোর সকল জেলায় কমিটি নেই, অফিস নেই—সেখানে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিটি কর্পোরেশন ও সাংগঠনিক জেলা সহ মোট ৮৭টি জেলায়,৬৫০টি থানা/উপজেলার সবগুলোতে,৩৩০টি পৌরসভার ৩৩০টিতেই এবং ৪৬৫০টি ইউনিয়নের দু-চারটি ব্যতিক্রম ছাড়া সবকটিতেই কমিটি রয়েছে। এমনকি অধিকাংশ এলাকায় তৃণমূল পর্যায়ে ৮০ থেকে ৯০ ভাগ ইউপি ওয়ার্ডেও শক্ত কমিটি দাড় করাতে সক্ষম হয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। সদ্য সমাপ্ত ইউপি নির্বাচনে সরকার দলীয় তান্ডবের মধ্যেও ইসলামী আন্দোলন সমর্থিত বেশ কয়েকজন মেম্বার প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন।এটা সকলকে রূটলেভেল বা ওয়ার্ড পর্যায়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের শক্তিশালী সাংগঠনিক উপস্থিতিরই জানান দেয়। সাংগঠনিক এ শক্তি শুধু ইসলামী দলই নয়,দেশের প্রধান দুটি দল বিএনপি-আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কোন রাজনৈতিক দলেরই নেই। এমনকি জাতীয় পার্টিরো নেই। এটা মৌখিক কথা নয়, তথ্য ভিত্তিক প্রমানিত বিষয়।

দেশের বাইরে বহির্বিশ্বেও রয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ – এর শাখা । আমেরিকা, ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও পূর্ব এশিয়ার মুসলিম দেশগুলো সহ বিশ্বের অনেক দেশেই প্রবাসী বাংলাদেশীরা ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর সদস্য/কর্মী হিসেবে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ওইসব দেশে ইসলামী আন্দোলনের সেন্ট্রাল ও শাখা কমিটি রয়েছে এবং ঢাকা থেকে কেন্দ্রীয় কমিটি এগুলোকে নিয়ন্ত্রন করছে।

মূল দলের পাশাপাশি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের রয়েছে অর্ধডজনেরও বেশী সহযোগী সংগঠন। দেশের গর্বিত সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে গঠিত হয়েছে ইসলামী মুক্তিযুদ্ধা পরিষদ। সুপ্রিমকোর্টের এক ঝাঁক তুখোড় আইনজীবীদের নেতৃত্বে গঠিত হয়েছে ইসলামী আইনজীবী পরিষদ। কৃষক শ্রমিক মেহনতি মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ইসলামী শ্রমিক আন্দোলন। দেশের বড় বড় পাটকল,বস্ত্রকলগুলো সরকার কর্তৃক বন্ধ করে দেয়ার আগ পর্যন্ত সেখানে শ্রমিকদের মাঝে ইসলামী শ্রমিক আন্দোলন বিশাল প্রভাব ফেলেছিলো। শ্রমিক ফেডারেশনের নির্বাচনে ইসলামী শ্রমিক আন্দোলন অংশগ্ৰহণ করে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। বর্তমানে শ্রমিকদের সব সেক্টরেই শ্রমিক আন্দোলন কাজ করছে। ছাত্র আন্দোলন, যুব আন্দোলন সহ সব সংগঠনের প্রতিটিরই আবার তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত কমিটি রয়েছে। প্রাচ্যের অক্সফোর্ডখ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে রয়েছে ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলনের শক্ত অবস্থান। এমনকি মালয়েশিয়ার ইউনিভার্সিটিতে ভিপি পদে দ্বিতীয় বারের মতো নির্বাচিত হয়েছে ছাত্র আন্দোলনেরই এক গর্বিত সন্তান।

(দুই) বিশাল কর্মী বাহিনী ঃ স্তরভিত্তিক দক্ষ নেতৃত্ব এবং নিবেদিতপ্রাণ কর্মী বাহিনী সকল সংগঠনেরই প্রাণশক্তি।

 

এ প্রাণশক্তি কার কতটুকু তা প্রত্যেকটি দল সম্পর্কে একটু খোঁজ খবর নিলেই যে কোনো অনুসন্ধিৎসু ব্যক্তির কাছে তা স্পষ্ট হয়ে ওঠবে। ইসলামী দলগুলো নিয়ে বস্তুনিষ্ঠভাবে অনুসন্ধান চালালে আমার মন্তব্যের সাথে আপনারা কেউ দ্বি-মত পোষণ করবেন বলে মনে হয় না। আসলেই কওমি মাদ্রাসার কিছু ছাত্র ছাড়া আলোচিত ইসলামী দলগুলোর বহিরাঙ্গনে কোনো কর্মী নেই। অবস্থা অনেকটা এ রকম যে, মাদ্রাসার মুহতামিম বা মুফতি সাহেব দলের বড় নেতা আর ছাত্ররা তার কর্মী। মাদ্রাসা বন্ধ থাকলে তারা কোন কর্মসূচি দিতে পারে না, দিলেও সফল হয়ন। দেশের বহুল প্রচারিত বেসরকারি Tv Channel News 24-এর অনুসন্ধানী সরেজমিন সচিত্র প্রতিবেদনে বিষয়টি বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে এবং অনুষ্ঠানের দর্শক মহল দেখেছেন— সেখানে প্রদত্ত সাক্ষাৎকারে ইসলামী ঐক্যজোটের নেতা জনাব মুফতি ফয়জুল্লাহ সাহেবও বিষয়টি প্রকারন্তরে স্বীকার করেছেন।

তবে দেশের বামপন্থী যে কোনো রাজ- – নৈতিক দলের চেয়ে এসব ইসলামী দলের অবস্থান ভালো । ইনু সাহেবদের জোট বামধারার ১১দল এবং এর বাইরে যারা আছেন সামগ্ৰিকভাবে তাদের মূল চালিকাশক্তি তো কলেজ-ইউনিভার্সিটির গুটিকয়েক ছাত্র-ছাত্রী। শিক্ষা সমাপনান্তে এরা যখন সমাজ জীবনের নানাক্ষেত্রে অবস্থান করে,তখন এরাই দলের একমাত্র সম্বল হিসেবে বিবেচিত হয়। এরাই কয়েকজন একত্রিত হয়ে রাজপথে শ্লোগান তুলে রাজনৈতিক অঙ্গনে সমাজতন্ত্রের অস্তিত্বের জানান দেয়। অবশ্য চীন-রাশিয়ার মত বিদেশি প্রভুদের কারনে এরা মিডিয়া জগতে খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে এবং সংবাদ কভারেজ পায়। ১০/১২ জন ছেলে-মেয়ে সামনে নিয়ে এরা এমন ভলিউমে বক্তব্য দেয়—মনে হয় যেন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে লক্ষ জনতার সামনে ঐতিহাসিক ভাষণ চলতেছে।

এসব বাম এবং আলোচিত ইসলামী দলগুলোর কর্মীদের অবস্থা, তাদের সংখ্যার সাথে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কর্মীদের পর্যালোচনায় নিলে যে কারো কাছেই ব্যবধানটা বড় স্পষ্টভাবেই ফুটে ওঠবে।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের রয়েছে মাঠপর্যায়ে স্তর ভিত্তিক দক্ষ নেতৃত্ব ও নিবেদিত প্রাণ বিশাল কর্মী বাহিনী। তৃণমূলের ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, থানা/উপজেলায় মূলদল এবং সহযোগী সংগঠনগুলো মিলিয়ে শত শত নিবেদিত কর্মী রয়েছে দলটির।এসব কর্মী নির্দিষ্ট কোনো শ্রেনি-পেশা থেকে নয়, বরং সমাজজীবনে বিরাজমান সব শ্রেনি-পেশার,সব স্তরের গণমানুষের প্রতিনিধিত্ব এখানে রয়েছে। এখানে যেমন আছে মাঠের কৃষক, কারখানার শ্রমিক, পরিবহন শ্রমিক,রিক্সা-ভ্যান চালক, জেলে, তাঁতী,কামার,কুমার সহ প্রান্তিক পর্যায়ের খেটে খাওয়া মহেনতি মানুষ— তেমনি আছে প্রাইমারী থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত,মক্তব থেকে দাওরা-তাকমিল পর্যন্ত সাধারণশিক্ষা -আলিয়া- কওমিয়া এ তৃ-ধারারই ছাত্র-শিক্ষক ও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদগণ। আছে ব্যবসায়ী, বিশেষজ্ঞ ডাক্তার, সুপ্রিমকোর্টসহ বিভিন্ন বারের বিশিষ্ট আইনজীবী, চাকরিজীবী, অবসরপ্রাপ্ত সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ। আছে উম্মাহর রাহবার

দেশবরেণ্য সর্বজন শ্রদ্ধেয় ওলামা মাশায়েখ এবং প্রথিতযশা ইসলামী চিন্তাবিদ ও বুদ্ধিজীবী গণ। এক কথায় দেশের সকল শ্রেনি- পেশাধারী গণ মানুষেরই প্রতিনিধিত্ব রয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কর্মী বাহিনীতে এবং সারা দেশব্যাপী তাদের সংখ্যা লাখ লাখ।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৮ সালের ০৫ অক্টোবর ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ রাজধানী ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় মহাসমাবেশ করেছিল। সংসদ ভেঙে নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আহুত এ মহাসমাবেশ ছিল সাম্প্রতিক কালে রাজনৈতিক দলগুলোর ডাকা সবচেয়ে বড় দুটি মহাসমাবেশের একটি এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর স্মরণকালের শ্রেষ্ঠ সমাবেশ। এর কয়েকদিন আগে প্রধান বিরোধী দল বিএনপিও একই জায়গায়,একই দাবিতে মহাসমাবেশ করেছিল। বিএনপির তুলনায় ইসলামী আন্দোলনের সমাবেশের আকার এবং দলীয় নেতা-কর্মীদের উপস্থিতি কোন ক্রমেই কম ছিলনা। BBC, Voice of America,CNN, আল-জাজিরা, রেডিও তেহরান সহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের গণমাধ্যম গুলো অত্যান্ত গুরুত্বের সাথে মহাসমাবেশের সব নিউজ প্রচার করেছে। তাদের ভাষ্যমতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান কানায় কানায় ভরে গিয়ে ইঞ্জিনিয়ার ইনস্টিটিউট পর্যন্ত উপসে পড়েছিল ইসলামী আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের ভীর। পর্যবেক্ষকদের দৃষ্টিতে এ বিশাল কর্মীবাহিনী ও সাংগঠনিক শক্তি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশকে একক বিকল্প তৃতীয় ধারা হিসেবে দাঁড় করিয়েছে। প্রথিতজশা লেখক, গবেষক মহিউদ্দিন আহমেদ, রাজনৈতিক বিশ্লেষক নবনিতা চৌধুরীসহ অনেকেই স্পষ্টত এ রকমটি মন্তব্য করেছেন।

বিশাল এ কর্মীবাহিনীকে কমিটি- কাঠামোর আওতায় সুশৃঙ্খল ভাবে পরিচালনা করতে গিয়ে ওয়ার্ড, ইউনিয়ন,থানা/উপজেলা, পৌরসভা, জেলা/মহানগর ও সংসদীয় এলাকায় ইসলামী আন্দোলনের স্তরভিত্তিক দক্ষ নেতৃত্বও গড়ে উঠেছে এবং ক্রমেই এ নেতৃত্বের গুণগতমান ও সংখ্যা দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে। DBC Television এর রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের চোখেও বিষয়টি ধরা পড়েছে। তারা মন্তব্য করেছেন,”বিগত২০০৮ সালের ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যেখানে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ অর্ধেক আসনে প্রার্থী দিতে পেরেছিল — সেখানে ২০১৮তে এসে তারা এককভাবে ২৯৯ আসনেই দলীয় প্রার্থী দেয়ার মতো সক্ষমতা অর্জন করেছে।” আমার জানা মতে বাকী০১টি— যশোর-০৩ আসনেও ইসলামী আন্দোলন প্রার্থী দিয়েছিল কিন্তু আইনী জটিলতা সৃষ্টি হওয়ায় সেটি বাতিল হয়ে যায়। অঞ্চল ভিত্তিক মানসম্পন্ন নেতৃত্ব সৃষ্টির ক্ষেত্রে ইসলামী আন্দোলনের এটা একটি বিরাট অগ্ৰগতি হিসেবে সচেতন মহলের যে কারো কাছেই বিবেচিত হবে।

পাশাপাশি পাঁচ বছর আগে বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলটি দু’হাজারের কাছাকাছি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রার্থী দিতে পেরেছিল। পাঁচ বছরে তৃণমূল পর্যায়ে নতুন কর্মী-সমর্থক বৃদ্ধি পেয়েছে। সেখান থেকে সৃষ্টি হয়েছে নির্বাচনী লড়াইয়ে নামার মানসিকতাপূর্ণ নতুন নেতৃত্বের। যতদূর জানা গেছে তাতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এবারের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ৪৬০০টি ইউনিয়নে দলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থী দেয়ার টার্গেট নিয়ে কাজ করছে। লক্ষ্যমাত্রার শতভাগ না হোক,যদি ৮০ ভাগ বা তার কাছাকাছিও পূরন করা যায়, তবে এটা হবে ইসলামী আন্দোলনের জন্যে বিরাট একটা অর্জন,মাইল ফলক ছোঁয়ার মত একটা অগ্ৰগতি।

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন-২০২১ এর সদ্য সমাপ্ত ১ম ধাপের নির্বাচন গত ২১জুন হয়ে গেল। ১ম ধাপের নির্বাচনের মূল চাপ প্রধানত দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ- পশ্চিমাঞ্চল তথা বরিশাল ও খুলনা বিভাগে ছিল। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ শতভাগ প্রার্থী নিশ্চিত করে নির্বাচনী মাঠে নামে। কিন্তু আওয়ামী লীগের স্থানীয় ক্যাডার বাহিনী প্রকাশ্য ভয়-ভীতি প্রদর্শন, সশস্ত্র মহড়া, প্রান নাশের হুমকি, মনোনয়নপত্র ছিনতাইসহ ভয়াবহ ত্রাস সৃষ্টির মাধ্যমে অনেক জায়গায়ই ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থীদেরকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে দেয়নি। যেখানে পরিস্থিতি তুলনামূলক একটুকম ভয়াবহ ছিল কিংবা কোন কৌশলের আশ্রয় নিয়ে মনোনয়নপত্র দাখিলের সুযোগ পেয়েছে সেখানেই ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র দাখিল করেছে।

প্রচারণা শুরুর কয়েক দিন পরেই করোনা মহামারীর ভয়াবহতা বৃদ্ধি পেলে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক নির্বাচন স্থাগিত হয়ে যায়। বরিশাল বিভাগের পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে শুধু এই বিভাগেই ২১জুন ভোটগ্ৰহন অনুষ্ঠিত হয়। আওয়ামী লীগের এতো সন্ত্রাসী তান্ডবের পরেও বরিশাল বিভাগে প্রথমধাপের ১৭২টি ইউনিয়নের মধ্যে

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ১১৯ টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রার্থী দিতে সক্ষম হয়। এর অর্থ আওয়ামী লীগ, বিএনপির সমান্তরালে তৃণমূলে ইসলামী আন্দোলনেরও যোগ্য কর্মী ও দক্ষ নেতৃত্ব সৃষ্টি হচ্ছে এবং তাদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে যা ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশকে একক তৃতীয় শক্তির পর্যায় নিয়ে গেছে।আগামীতে সকল ধরনের নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ দলীয় প্রার্থী দিতে সক্ষম ইনশাআল্লাহ।

(চলবে)