ঢাকা ০৯:১৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪

বিক্ষোভের মুখে ভারতের সাথে বন্দর চুক্তি বাতিল করল শ্রীলঙ্কা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:  দেশ জুড়ে প্রবল বিক্ষোভের জেরে ভারতের সাথে বন্দর-টার্মিনাল গড়ার চুক্তি বাতিল করল শ্রীলঙ্কা। বন্দরের বেসরকারিকরণের বিরুদ্ধে বেশ কিছু দিন ধরে বিক্ষোভ চলছিল সেখানে। তাতেই চুক্তি থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মাহিন্দ রাজাপাকসে সরকার। ওই বন্দরে বিনিয়োগ করার কথা ছিল ভারতের আদানি গ্রুপের।

২০১৯ সালে কলম্বো বন্দরের পূর্ব প্রান্তে একটি টার্মিনাল গড়তে ভারত এবং জাপানের সাথে চুক্তি হয় শ্রীলঙ্কার। এর আওতায় টার্মিনালের ৪৯ শতাংশ মালিকানা ভারত ও জাপানের হাতে এবং বাকি ৫১ শতাংশ শ্রীলঙ্কার হাতে থাকবে বলে ঠিক হয়েছিল। ভারতের পক্ষে বিনিয়োগকারী ছিল আদানি গ্রুপ।

কিন্তু বন্দরের বেসরকারিকরণের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানাতে শুরু করে সে দেশের ২৩টি শ্রমিক সংগঠন এবং বিরোধী দলগুলি। ওই টার্মিনালের ১০০ শতাংশ মালিকানাই বন্দর কর্তৃপক্ষের হাতে রাখতে হবে বলে দাবি ওঠে। এমন পরিস্থিতিতে প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসকেও এগিয়ে আসতে হয়। তিনি জানান, সমুদ্রপথে বিদেশ থেকে আমদানিকৃত পণ্য কলম্বো হয়ে ভারতে পৌঁছে দেয়া হয়। চুক্তি বাতিল হলে, তাতে অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে।

কিন্তু প্রেসিডেন্টের বার্তায় আস্থা রাখেনি বিক্ষোভকারীদের। বরং দেশের সাধারণ মানুষও তাতে যোগ দেন। শুধু তাই নয়, রাজাপাকসে সরকারের অনেক মন্ত্রী-আমলাও এই বেসরকারিকরণের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে সরব হন। তাতেই চুক্তি বাতিল করতে বাধ্য হয় শ্রীলঙ্কা সরকার।

শ্রীলঙ্কার এই সিদ্ধান্তে কূটনীতিকভাবেও ভারত বড় ধাক্কা খেল বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক মহল। ভারত মহাসাগরে শ্রীলঙ্কার উপস্থিতি বরাবরই ভরসার জায়গা দিল্লির কাছে। বিশেষত চীন যখন সেখানে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে। শ্রীলঙ্কায় ইতোমধ্যেই হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে চীন। সেখানে সমুদ্রবন্দর, বিমানবন্দর, বন্দর-শহর, জাতীয় সড়ক এবং বিদ্যুৎ বণ্টন কেন্দ্র গড়তে প্রচুর অর্থ ব্যায় করেছে তারা।

রাজাপাকসে সরকারকে মোটা টাকার ঋণও দিয়েছে চীন। ওই ঋণের পরিমাণ এতটাই যে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের মতে তা রাজাপাকসে সরকারের পক্ষে শোধ করা কার্যত অসম্ভব। সম্প্রতি তার নিদর্শনও পাওয়া গেছে। ঋণ শোধ করতে না পেরে ২০১৭ সালে সেখানকার একটি বন্দর বেজিংয়ের এক সংস্থাকে ৯৯ বছরের জন্য লিজ দিতে বাধ্য হয় কলম্বো। তবে এই চুক্তি বাতিল করলেও কলম্বো বন্দরের পশ্চিমে আর একটি টার্মিনাল উন্নয়ন প্রকল্পে ভারত এবং জাপানকে যুক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছে শ্রীলঙ্কা।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

মির্জাগঞ্জে রাতের আধারে বসতঘর লুটপাট

বিক্ষোভের মুখে ভারতের সাথে বন্দর চুক্তি বাতিল করল শ্রীলঙ্কা

আপডেট টাইম : ১২:২০:০১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ ফেব্রুয়ারী ২০২১

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:  দেশ জুড়ে প্রবল বিক্ষোভের জেরে ভারতের সাথে বন্দর-টার্মিনাল গড়ার চুক্তি বাতিল করল শ্রীলঙ্কা। বন্দরের বেসরকারিকরণের বিরুদ্ধে বেশ কিছু দিন ধরে বিক্ষোভ চলছিল সেখানে। তাতেই চুক্তি থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মাহিন্দ রাজাপাকসে সরকার। ওই বন্দরে বিনিয়োগ করার কথা ছিল ভারতের আদানি গ্রুপের।

২০১৯ সালে কলম্বো বন্দরের পূর্ব প্রান্তে একটি টার্মিনাল গড়তে ভারত এবং জাপানের সাথে চুক্তি হয় শ্রীলঙ্কার। এর আওতায় টার্মিনালের ৪৯ শতাংশ মালিকানা ভারত ও জাপানের হাতে এবং বাকি ৫১ শতাংশ শ্রীলঙ্কার হাতে থাকবে বলে ঠিক হয়েছিল। ভারতের পক্ষে বিনিয়োগকারী ছিল আদানি গ্রুপ।

কিন্তু বন্দরের বেসরকারিকরণের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানাতে শুরু করে সে দেশের ২৩টি শ্রমিক সংগঠন এবং বিরোধী দলগুলি। ওই টার্মিনালের ১০০ শতাংশ মালিকানাই বন্দর কর্তৃপক্ষের হাতে রাখতে হবে বলে দাবি ওঠে। এমন পরিস্থিতিতে প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসকেও এগিয়ে আসতে হয়। তিনি জানান, সমুদ্রপথে বিদেশ থেকে আমদানিকৃত পণ্য কলম্বো হয়ে ভারতে পৌঁছে দেয়া হয়। চুক্তি বাতিল হলে, তাতে অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে।

কিন্তু প্রেসিডেন্টের বার্তায় আস্থা রাখেনি বিক্ষোভকারীদের। বরং দেশের সাধারণ মানুষও তাতে যোগ দেন। শুধু তাই নয়, রাজাপাকসে সরকারের অনেক মন্ত্রী-আমলাও এই বেসরকারিকরণের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে সরব হন। তাতেই চুক্তি বাতিল করতে বাধ্য হয় শ্রীলঙ্কা সরকার।

শ্রীলঙ্কার এই সিদ্ধান্তে কূটনীতিকভাবেও ভারত বড় ধাক্কা খেল বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক মহল। ভারত মহাসাগরে শ্রীলঙ্কার উপস্থিতি বরাবরই ভরসার জায়গা দিল্লির কাছে। বিশেষত চীন যখন সেখানে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে। শ্রীলঙ্কায় ইতোমধ্যেই হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে চীন। সেখানে সমুদ্রবন্দর, বিমানবন্দর, বন্দর-শহর, জাতীয় সড়ক এবং বিদ্যুৎ বণ্টন কেন্দ্র গড়তে প্রচুর অর্থ ব্যায় করেছে তারা।

রাজাপাকসে সরকারকে মোটা টাকার ঋণও দিয়েছে চীন। ওই ঋণের পরিমাণ এতটাই যে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের মতে তা রাজাপাকসে সরকারের পক্ষে শোধ করা কার্যত অসম্ভব। সম্প্রতি তার নিদর্শনও পাওয়া গেছে। ঋণ শোধ করতে না পেরে ২০১৭ সালে সেখানকার একটি বন্দর বেজিংয়ের এক সংস্থাকে ৯৯ বছরের জন্য লিজ দিতে বাধ্য হয় কলম্বো। তবে এই চুক্তি বাতিল করলেও কলম্বো বন্দরের পশ্চিমে আর একটি টার্মিনাল উন্নয়ন প্রকল্পে ভারত এবং জাপানকে যুক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছে শ্রীলঙ্কা।