ঢাকা ০৫:৩৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক আরো গভীর হবে, বললেন জয়শঙ্কর

আলোর জগত ডেস্ক :  ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রামনিয়াম জয়শঙ্কর এখন ঢাকায়। তিন দিনের সফরে সোমবার রাতে ঢাকায় পৌঁছান তিনি।

আরো পড়ুন :  এডিশ মশা নিধনে ডিএনসিসির চিরুনি অভিযান মঙ্গলবার

বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভারত-বাংলাদেশ নিবিড় বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র। আশা করি এই সফরের মাধ্যমে সেই সম্পর্ক আরো গভীর ও দৃঢ় হবে।

তিনি বলেন, প্রতিবেশি দেশগুলোর মধ্যে ভারতের কাছে বাংলাদেশ সব সময়ই বেশি প্রাধান্য পেয়ে আসছে, ভবিষ্যতেও পাবে।

দ্বিপক্ষীয় আলোচনার বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনেক বিষয়ে আলোচনা হবে। আলোচনা ফলপ্রসূও হবে।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি নিয়মিত ফ্লাইটে রাত ৯টা ২০ মিনিটের দিকে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান ড. এস জয়শঙ্কর। তাকে স্বাগত জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। এ সময় ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাই কমিশনার রীভা গাঙ্গুলী, দিল্লিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাই কমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী উপস্থিত ছিলেন।

সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বলেন, আমি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ার পর প্রথম আমন্ত্রণ পাই ভারতের। তবে সে সময় সেখানে অবস্থানকালে তাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে আমাদের দেশে আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। তিনি সেই আমন্ত্রণ রক্ষা করে আমাদের দেশে আসলেন।

কাশ্মীর ইস্যুতে এক প্রশ্নের জবাবে ড. মোমেন বলেন, আমাদের অনেক প্রত্যাশা আছে। দু’দেশের সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিতে আগামীকাল (মঙ্গলবার) অনেককিছু আলোচনার আছে। আজ তো উনি আসলেন মাত্র। আমরা আশাবাদী।

গত ৩০ মে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণের পর জয়শঙ্করের এটিই প্রথম বাংলাদেশ সফর। ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত তিনি ভারতের পররাষ্ট্র সচিব ছিলেন।

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মঙ্গলবার সকালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করবেন। পরে সকাল ১১টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসবেন তিনি। বৈঠক শেষে একটি যৌথ সংবাদ সম্মেলন হওয়ার কথা আছে।

বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরবর্তী ভারত সফর আগামী অক্টোবরে। জয়শংকরের এই সফরকালেই তার সফরসূচি নির্ধারণ হবে। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিক রাজনীতি বিশেষ গুরুত্ব পাবে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকে এসব বিষয় স্থান পাবে। এ ছাড়া বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক আরও নিবিড় করা এবং রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়টিও আলোচনায় প্রাধান্য পাবে।

এদিকে জয়শঙ্করের ঢাকা সফর দুই দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে দিল্লির কূটনৈতিক সূত্র জানায়, উপমহাদেশ এবং এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল ঘিরে বাণিজ্যিক ও রাজনীতির নতুন পটভূমি তৈরি হচ্ছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ এ অঞ্চলের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে ক্রমশ জটিল করে তুলছে। ভারত এ অবস্থার ওপর গভীর দৃষ্টি রাখছে। এ কারণে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টিও ভারতের কাছে এ মুহূর্তে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

তাছাড়া প্রতিবেশিদের মধ্যে পাকিস্তান ছাড়া অন্য সবার সঙ্গে ভারতের সুসম্পর্ক রয়েছে। আবার পাকিস্তানের সঙ্গে টানাপড়েনে বিশ্বরাজনীতির বড় কুশীলবরা যেন কোনো ধরনের সুযোগ নিতে না পারে, সে বিষয়েও ভারত সতর্ক। সার্বিকভাবে উপমহাদেশ ও এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল ঘিরে ক্রমশ-পরিবর্তিত বিশ্বরাজনীতির পটভূমিতে শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদির আলোচনা বিশেষ গুরুত্ব পাবে।

সূত্র আরও জানায়, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক গত এক দশকে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছে। এই এক দশকে সমুদ্রসীমা-সংক্রান্ত বিরোধ নিস্পত্তি এবং স্থল সীমানা চুক্তি বাস্তবায়ন দু’দেশের ভেতরে অত্যন্ত ভালো বোঝাপড়া এবং নিবিড় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কেরই পরিচয়। তা সত্ত্বেও দু’দেশের সম্পর্কে কিছু বিষয় অমীমাংসিত রয়েছে। বিশেষ করে তিস্তাসহ অভিন্ন নদীগুলোর পানি বণ্টন চুক্তি এখন পর্যন্ত ঝুলে আছে। এর বাইরে আসামে জাতীয় নিবন্ধন ঘিরে জটিলতা দু’দেশের সম্পর্কে সামান্য হলেও উত্তাপ ছড়াচ্ছে।

দিল্লির এই কূটনৈতিক সূত্রের মতে, অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন চুক্তি এবং আসাম পরিস্থিতিও বাংলাদেশ-ভারত শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকে গুরুত্বসহকারে আলোচিত হবে এবং এ বিষয়ে উদ্বেগ নিরসনের চেষ্টা করা হবে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দু’নেতার বৈঠকে বাংলাদেশ ও ভারতের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের নানা বিষয় নিয়েই আলোচনা হবে। শেখ হাসিনার দিল্লি সফরের মধ্য দিয়ে দুই বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশি দেশের রাজনৈতিক সম্পর্ক আরও নিবিড় হবে বলেও প্রত্যাশা কূটনীতিকদের।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

মির্জাগঞ্জে রাতের আধারে বসতঘর লুটপাট

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক আরো গভীর হবে, বললেন জয়শঙ্কর

আপডেট টাইম : ০২:৩৮:২৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ অগাস্ট ২০১৯

আলোর জগত ডেস্ক :  ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রামনিয়াম জয়শঙ্কর এখন ঢাকায়। তিন দিনের সফরে সোমবার রাতে ঢাকায় পৌঁছান তিনি।

আরো পড়ুন :  এডিশ মশা নিধনে ডিএনসিসির চিরুনি অভিযান মঙ্গলবার

বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভারত-বাংলাদেশ নিবিড় বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র। আশা করি এই সফরের মাধ্যমে সেই সম্পর্ক আরো গভীর ও দৃঢ় হবে।

তিনি বলেন, প্রতিবেশি দেশগুলোর মধ্যে ভারতের কাছে বাংলাদেশ সব সময়ই বেশি প্রাধান্য পেয়ে আসছে, ভবিষ্যতেও পাবে।

দ্বিপক্ষীয় আলোচনার বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনেক বিষয়ে আলোচনা হবে। আলোচনা ফলপ্রসূও হবে।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি নিয়মিত ফ্লাইটে রাত ৯টা ২০ মিনিটের দিকে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান ড. এস জয়শঙ্কর। তাকে স্বাগত জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। এ সময় ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাই কমিশনার রীভা গাঙ্গুলী, দিল্লিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাই কমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী উপস্থিত ছিলেন।

সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বলেন, আমি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ার পর প্রথম আমন্ত্রণ পাই ভারতের। তবে সে সময় সেখানে অবস্থানকালে তাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে আমাদের দেশে আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। তিনি সেই আমন্ত্রণ রক্ষা করে আমাদের দেশে আসলেন।

কাশ্মীর ইস্যুতে এক প্রশ্নের জবাবে ড. মোমেন বলেন, আমাদের অনেক প্রত্যাশা আছে। দু’দেশের সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিতে আগামীকাল (মঙ্গলবার) অনেককিছু আলোচনার আছে। আজ তো উনি আসলেন মাত্র। আমরা আশাবাদী।

গত ৩০ মে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণের পর জয়শঙ্করের এটিই প্রথম বাংলাদেশ সফর। ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত তিনি ভারতের পররাষ্ট্র সচিব ছিলেন।

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মঙ্গলবার সকালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করবেন। পরে সকাল ১১টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসবেন তিনি। বৈঠক শেষে একটি যৌথ সংবাদ সম্মেলন হওয়ার কথা আছে।

বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরবর্তী ভারত সফর আগামী অক্টোবরে। জয়শংকরের এই সফরকালেই তার সফরসূচি নির্ধারণ হবে। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিক রাজনীতি বিশেষ গুরুত্ব পাবে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকে এসব বিষয় স্থান পাবে। এ ছাড়া বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক আরও নিবিড় করা এবং রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়টিও আলোচনায় প্রাধান্য পাবে।

এদিকে জয়শঙ্করের ঢাকা সফর দুই দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে দিল্লির কূটনৈতিক সূত্র জানায়, উপমহাদেশ এবং এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল ঘিরে বাণিজ্যিক ও রাজনীতির নতুন পটভূমি তৈরি হচ্ছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ এ অঞ্চলের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে ক্রমশ জটিল করে তুলছে। ভারত এ অবস্থার ওপর গভীর দৃষ্টি রাখছে। এ কারণে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টিও ভারতের কাছে এ মুহূর্তে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

তাছাড়া প্রতিবেশিদের মধ্যে পাকিস্তান ছাড়া অন্য সবার সঙ্গে ভারতের সুসম্পর্ক রয়েছে। আবার পাকিস্তানের সঙ্গে টানাপড়েনে বিশ্বরাজনীতির বড় কুশীলবরা যেন কোনো ধরনের সুযোগ নিতে না পারে, সে বিষয়েও ভারত সতর্ক। সার্বিকভাবে উপমহাদেশ ও এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল ঘিরে ক্রমশ-পরিবর্তিত বিশ্বরাজনীতির পটভূমিতে শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদির আলোচনা বিশেষ গুরুত্ব পাবে।

সূত্র আরও জানায়, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক গত এক দশকে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছে। এই এক দশকে সমুদ্রসীমা-সংক্রান্ত বিরোধ নিস্পত্তি এবং স্থল সীমানা চুক্তি বাস্তবায়ন দু’দেশের ভেতরে অত্যন্ত ভালো বোঝাপড়া এবং নিবিড় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কেরই পরিচয়। তা সত্ত্বেও দু’দেশের সম্পর্কে কিছু বিষয় অমীমাংসিত রয়েছে। বিশেষ করে তিস্তাসহ অভিন্ন নদীগুলোর পানি বণ্টন চুক্তি এখন পর্যন্ত ঝুলে আছে। এর বাইরে আসামে জাতীয় নিবন্ধন ঘিরে জটিলতা দু’দেশের সম্পর্কে সামান্য হলেও উত্তাপ ছড়াচ্ছে।

দিল্লির এই কূটনৈতিক সূত্রের মতে, অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন চুক্তি এবং আসাম পরিস্থিতিও বাংলাদেশ-ভারত শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকে গুরুত্বসহকারে আলোচিত হবে এবং এ বিষয়ে উদ্বেগ নিরসনের চেষ্টা করা হবে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দু’নেতার বৈঠকে বাংলাদেশ ও ভারতের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের নানা বিষয় নিয়েই আলোচনা হবে। শেখ হাসিনার দিল্লি সফরের মধ্য দিয়ে দুই বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশি দেশের রাজনৈতিক সম্পর্ক আরও নিবিড় হবে বলেও প্রত্যাশা কূটনীতিকদের।