বিনোদন ডেস্ক: কিংবদন্তি কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের অষ্টম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ২০১২ সালের আজকের এই দিনে যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। সেই সময় ক্যানসারের চিকিৎসার জন্য তিনি যুক্তরাষ্ট্রে ছিলেন।
হুমায়ূন আহমেদের শরীরে ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে মরণব্যাধি ক্যানসার ধরা পড়ে। এরপর তিনি উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে যান। সেখানে ২০১২ সালের জুলাই মাসের ১৬ তারিখে তিনি চলে যান লাইফ সাপোর্টে। সেই অবস্থাতেই ১৯ জুলাই বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ১১টায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। নিউইয়র্ক থেকে ২০১২ সালের ২৩ জুন দেশে ফিরিয়ে আনা হয় হুমায়ূন আহমেদের মরদেহ। ২৪ জুন তাকে সমাহিত করা হয় তার গড়ে তোলা গাজীপুরের নুহাশপল্লীর লিচুতলায়।
হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাসে নিজের প্রতিভার বিস্তার ঘটলেও তার শুরুটা ছিল কবিতা দিয়ে। এরপর নাটক, শিশুসাহিত্য, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী, চলচ্চিত্র পরিচালনা থেকে শিল্প-সাহিত্যের প্রতিটি ক্ষেত্রেই তিনি রেখে গেছেন নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর। হুমায়ূন আহমেদ বাংলা সাহিত্যে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর জনকও বটে। ১৯৭২ সালে প্রথম উপন্যাস ‘নন্দিত নরকে’ প্রকাশের পরপরই তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। উপন্যাসে ও নাটকে তার সৃষ্ট চরিত্রগুলো বিশেষ করে ‘হিমু’, ‘মিসির আলী’, ‘শুভ্র’ তরুণ-তরুণীদের কাছে হয়ে ওঠে অনুকরণীয়।
টেলিভিশনের জন্য একের পর এক দর্শকনন্দিত নাটক রচনা ও পরিচালনার পাশাপাশি হুমায়ূন আহমেদ ১৯৯০-এর গোড়ার দিকে চলচ্চিত্র নির্মাণ শুরু করেন। তার পরিচালনায় প্রথম চলচ্চিত্র ‘আগুনের পরশমণি’ মুক্তি পায় ১৯৯৪ সালে। ২০০০ সালে ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ ও ২০০১ সালে ‘দুই দুয়ারী’ দর্শকদের দারুণ গ্রহণযোগ্যতা পায়। ২০০৩-এ নির্মাণ করেন ‘চন্দ্রকথা’।
১৯৭১-এ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ২০০৪ সালে হুমায়ূন আহমেদ নির্মাণ করেন ‘শ্যামল ছায়া’। এটি ২০০৬ সালে অস্কারের সেরা বিদেশি ভাষার চলচ্চিত্র বিভাগে বাংলাদেশ থেকে অংশ নিয়েছিল। এছাড়া এটি প্রদর্শিত হয় কয়েকটি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে। ২০০৮-এ ‘আমার আছে জল’ পরিচালনা করেন তিনি। তার সব চলচ্চিত্রের বেশিরভাগ গান রচনা করেছেন তিনি নিজেই। ২০১২ সালে মুক্তি পায় তার পরিচালিত শেষ ছবি ‘ঘেটুপুত্র কমলা’।
উল্লেখ্য, হুমায়ূন আহমেদ ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার কুতুবপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তার ডাক নাম কাজল। বাবা ফয়জুর রহমান আহমেদ ও মা আয়েশা ফয়েজের প্রথম সন্তান তিনি। বাবা ফয়জুর রহমান আহমেদ ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা আর মা ছিলেন গৃহিণী। তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। কথাসাহিত্যিক জাফর ইকবাল তার ছোট ভাই। সবার ছোট ভাই আহসান হাবীব নামকরা কার্টুনিস্ট ও রম্যলেখক।
বাংলা সাহিত্যে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পদক ‘একুশে পদক’ লাভ করেন। এছাড়া তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৮১), হুমায়ুন কাদির স্মৃতি পুরস্কার (১৯৯০), লেখক শিবির পুরস্কার (১৯৭৩), জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (১৯৯৩ ও ১৯৯৪), বাচসাস পুরস্কার (১৯৮৮) লাভ করেন।