আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বর্তমানে পুরো বিশ্বের জন্য এখন দরকার করোনা টিকা বা ভ্যাকসিন। এটি পাওয়া গেলে সবার জন্যই একটা বিরাট সুসংবাদ। এরই মাঝে ভ্যাকসিনের জন্য কাঁকড়ার নীল রক্ত প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু কেন?
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন আবিষ্কার করতে এই ধরনের কাঁকড়ার চাহিদা বেড়ে যাবে বহুগুণ।
ন্যাশনাল জিওগ্রাফির প্রতিবেদনে বলা হয়, কাঁকড়ার নীল রক্ত কভিড-১৯ ভ্যাকসিন তৈরির মূল চাবিকাঠি। এ জন্য বিশ্বের সবচাইতে প্রাচীনতম এই প্রাণী ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
বিবিসি জানায়, ডাইনোসর বিলুপ্ত হয়ে গেছে, কিন্তু নাল কাঁকড়া এখনো টিকে রয়েছে। ধারণা করা হয়, এরা অন্তত গত ৪৫ কোটি বছর ধরে পৃথিবীতে বিচরণ করছে।
এজন্য নাল কাঁকড়াকে জীবন্ত জীবাশ্ম বলেও বর্ণনা করা হয়। কোন টিকা নিরাপদ কিনা তা পরীক্ষার জন্য এই কাঁকড়ার রক্ত খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
সেই ১৯৭০ এর দশক থেকে বিজ্ঞানীরা কাঁকড়ার নীল রক্ত সংগ্রহ করে আসছেন। তারা এটি মূলত ব্যবহার করেন, চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং ধমনীর ভেতর সরাসরি ঢুকিয়ে দিতে হয়, এমন ওষুধ বিষ বা জীবাণুমুক্ত কিনা সেটা পরীক্ষার জন্য।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, মানুষের রক্তে আয়রন বা লোহার উপস্থিতি রয়েছে। এ জন্য রক্ত লাল দেখায়। আর ‘নাল কাঁকড়ায়’ রয়েছে তামা। ফলে এদের রঙ নীল দেখায়।
তবে নাল কাঁকড়ার নীল রক্ত নিয়ে বিজ্ঞানীদের আগ্রহ নেই। বিজ্ঞানীদের আগ্রহ হচ্ছে- কাঁকড়ার রক্তে তামা ছাড়াও আছে একটি বিশেষ ধরনের রাসায়নিক পদার্থ, যেটি আসলে ব্যাকটেরিয়াকে আটকে ফেলতে পারে তার চারপাশে রক্ত জমাট বাঁধানোর মাধ্যমে।
এছাড়া কাঁকড়ার রক্ত দিয়ে তৈরি করা হয় এক ধরনের প্রোটিন এজেন্ট বা জমাট বাঁধানোর রাসায়নিক।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের জন্য প্রতিবছর আটলান্টিক মহাসাগর থেকে প্রায় পাঁচ লাখ নাল কাঁকড়া ধরা হয়।
বিশ্বের সবচাইতে দামি তরল পদার্থের একটি হচ্ছে এই ধরণের কাঁকড়ার রক্ত। মাত্র এক লিটার এই কাঁকড়ার রক্ত বিক্রি হয় ১৫ হাজার ডলারে।
এই রক্ত সংগ্রহ করতে কাঁকড়ার হৃদযন্ত্রের কাছাকাছি ছিদ্র করা হয়। এরপর সেখানে দিয়ে প্রায় ৩০ শতাংশ রক্ত সংগ্রহ করা হয়। রক্ত সংগ্রহ শেষে তা আবার আবাসস্থলে ছেড়ে দেওয়া হয়।
কিন্তু এই প্রক্রিয়ায় অন্তত ১০ থেকে তিন শতাংশ কাঁকড়া মারা যায়। ফলে বিলুপ্তের পথ রয়েছে এই কাঁকড়া। এ জন্য বিজ্ঞানীরা বিকল্প ভাবছেন। তবে এই মুহূর্তে করোনা ভ্যাকসিনের জন্য নীল কাঁকড়া ছাড়া আর বিকল্প নেই।
এই মুহূর্তে পৃথিবীজুড়ে করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন আবিষ্কারে কাজ করছে বিজ্ঞানীদের দুশ’র বেশি দল। কোন কোন ভ্যাকসিন এরই মধ্যে মানবদেহে প্রয়োগ করে ক্লিনিকাল ট্রায়াল চালানো হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সির ‘দ্য নেচার কনজারভেন্সির’ গবেষক ড. বারবারা ব্রামার বলেন, ‘এখন ৩০টির বেশি কোম্পানি ভ্যাকসিন নিয়ে কাজ করছে। এই কোম্পানিগুলোকে বহু ধরনের স্টেরাইলিটি টেস্ট চালাতে হয়। এজন্য কাঁকড়ার প্রয়োজন হয় ব্যাপক।’