চট্টগ্রাম নগরের ইপিজেড থানা এলাকায় মো. আবদুল্লাহ নামে ১৩ বছর বয়সী এক কিশোর হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এ ঘটনায় মো. হাসান (১৫) নামে অভিযুক্ত কিশোরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। একই সঙ্গে ভুক্তভোগী কিশোরের মরদেহ গুমের অভিযোগে অভিযুক্ত কিশোরের মা হাফিজা বেগমকে (৩৬) আটক করা হয়েছে।
ডিবি জানিয়েছে, ভুক্তভোগী আবদুল্লাহ এবং অভিযুক্ত হাসান দুজনেই বন্ধু ছিল। মোবাইল ফোনে গেম খেলা নিয়ে বাকবিতণ্ডার জেরে আবদুল্লাহকে কিল-ঘুষি দিয়ে হত্যা করে হাসান।
গত ১৪ ডিসেম্বর সকালে ইপিজেড থানার বন্দরটিলা হামিদ আলী টেন্ডল রোডের দুটি ভবনের মাঝখানে পড়ে থাকা একটি বস্তা থেকে ভুক্তভোগী আবদুল্লাহর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় তদন্তে নেমে ওই দিন বিকেলে অভিযুক্ত হাফিজাকে ইপিজেড থানা এলাকার একটি পোশাক কারখানা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর তার দেওয়া তথ্যে প্রধান অভিযুক্ত হাসানকে আনোয়ারা উপজেলা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। ঘটনার পর খালার বাসায় পালিয়েছিলেন হাসান।
ডিবি সূত্র জানায়, ভুক্তভোগী কিশোরের বাবা নগরের একটি ইপিজেড কারখানায় চাকরি করেন। অভিযুক্ত হাসানের বাবা-মা দুজনেই পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। তারা ইপিজেড থানা এলাকায় পাশাপাশি থাকেন। অভিযুক্ত হাসান ও ভুক্তভোগী আবদুল্লাহ কয়েক বছর আগে বন্দরটিলা হাবীবীয়া তাজবিদুল কুরআন অ্যাকাডেমিতে পড়ালেখা করত। সেখানে দুজনের বন্ধুত্ব হয়। দুয়েক বছর আগে ভুক্তভোগী কিশোর আবদুল্লাহ পড়ালেখার জন্য ঝালকাঠি জেলায় গ্রামের বাড়িতে চলে যায়।
সম্প্রতি বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হলে আবদুল্লাহ ইপিজেড থানা এলাকায় বাবার বাসায় বেড়াতে আসে। সেখানে দুই বন্ধুর পুনরায় দেখা হয়। এরপর তারা দুজনেই একসঙ্গে প্রতিদিন খেলাধুলা করত। এভাবে ৪/৫ দিন পর গত ১৩ ডিসেম্বর সকাল ৮ টার দিকে হাসান ভুক্তভোগী আবদুল্লাহর বাসায় গিয়ে তাকে নিয়ে নিজের বাসায় চলে যায়। সেখানে দুই বন্ধু মিলে মোবাইল ফোনে ফ্রি-ফায়ার গেম খেলে। খেলাকে কেন্দ্র করে দুই বন্ধুর বাকবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে আবদুল্লাহকে কিল-ঘুষি মারে হাসান। এতে হাসান মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।
অভিযুক্ত কিশোর হাসান তার মায়ের মোবাইল থেকে আবদুল্লাহর বাবাকে ফোন করে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে হাসান জানায়, সে মনে করেছিল আবদুল্লাকে খুঁজতে হয়ত তার বাবা বাসায় চলে আসতে পারে। এতে করে সে পালানোর সুযোগ পাবে না। এই আশঙ্কা থেকে মুক্তিপণ দাবি করা হয়।
এদিকে, ১৩ ডিসেম্বর বাসায় ফিরে হাসানের মা হাফিজা হতভম্ব হয়ে পড়ে। ছেলেকে বাঁচাতে তিনি ভুক্তভোগী আবদুল্লাহর মরদেহ গুমের পরিকল্পনা নেয়। এর অংশ হিসেবে বস্তায় ভরে আবদুল্লাহর মরদেহ দুটি ভবনের মাঝখানে ফেলে দেয়।
চট্টগ্রাম মহানগর ডিবির বন্দর ও পশ্চিম জোনের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. আলী হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, শুধু মোবাইল গেমকে কেন্দ্র করে এ হত্যাকাণ্ড বলে মনে হচ্ছে। কিশোরের মা হত্যার সঙ্গে জড়িত না থাকলেও মরদেহ গুমের সঙ্গে জড়িত। ভুক্তভোগী কিশোরের বাবাকে যে নম্বর থেকে কল করে মুক্তিপণ দাবি করা হয়েছিল সেটি অভিযুক্ত কিশোরের মায়ের। এই সূত্র ধরে প্রথমে অভিযুক্ত কিশোরের মাকে এবং পরবর্তীতে প্রধান অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়। দুজনকে ইপিজেড থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। তাদেরকে সংশ্লিষ্ট মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে প্রেরণ করা হবে।