সরকারবিরোধী চূড়ান্ত আন্দোলনে এসে গ্রেফতার এড়াতে কৌশল অবলম্বন করছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। এ কারণেই চলমান হরতাল-অবরোধে রাজপথ থেকে দূরত্ব বজায় রেখেছেন অনেকে। তবে সাময়িক গাঢাকা দেওয়া নেতারা তফসিলকেন্দ্রিক আন্দোলনে মাঠে নামবেন। মূলত গ্রেফতার এড়িয়ে আন্দোলন একটা পর্যায়ে নিতেই বিএনপির এ নীতি বলে জানা গেছে। আর তফসিলের পরদিন ‘অসহযোগ’ আন্দোলনের ঘোষণা নিয়ে আলোচনা চলছে বলেও জানিয়েছে একটি সূত্র। দলটির নেতারা বলছেন, সামনে আন্দোলন জোরদার হবে। তখন সম্মিলিতভাবে নেতাকর্মীদের মাঠে দেখা যাবে।
‘যেসব নেতাকে মাঠে দেখা যাচ্ছে না, তারা নিজ নিজ অবস্থানে থেকে দলের নানা কর্মকাণ্ডে অংশ নিচ্ছেন। অবশ্যই তারা মাঠে নামবেন। তিনি বলেন, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে নানা কৌশল থাকে। অনেকেই কৌশলী অবস্থানে আছেন।’- বিএনপি নেতা আব্দুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল
এছাড়া গত কয়েকদিনে সারাদেশে আট হাজারের বেশি বিএনপি নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়েছেন বলে দাবি দলটির। এমন পরিস্থিতিতে গ্রেফতার এড়িয়ে আন্দোলন জোরদারে কৌশলী বিএনপি।
সূত্র মতে, দলটির সব পর্যায়ের নেতাদের তফসিলের আগ পর্যন্ত গ্রেফতার এড়িয়ে চলার নির্দেশনা রয়েছে। তাই, চলমান হরতাল-অবরোধে নেতাকর্মীরা মাঠে কম থাকলেও তফসিল ঘোষণার পর তারা মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তফসিলের আগে ও পরে কর্মসূচি নির্ধারণে দলটির হাইকমান্ড নিজ দলের পাশাপাশি সমমনা দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে মতামত নিচ্ছেন। ইসলামী আন্দোলনসহ কয়েকটি দলকে তফসিল ঘোষণাকেন্দ্রিক আন্দোলনে পাশে পেতে তৎপরতা চালাচ্ছে বিএনপি।
বিএনপির একাধিক সূত্র বলছে, বিগত দিনে ডিএমপির অনুমতি সাপেক্ষে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করলেও বর্তমানে তা দুরূহ ব্যাপার। ডিএমপিকে চ্যালেঞ্জ করে কর্মসূচি পালনে এক্সপেরিমেন্ট করতেই ২৮ অক্টোবর পরবর্তী কর্মসূচি পালনের ক্ষেত্রে গ্রেফতার এড়ানোর কৌশল অবলম্বন করা হয়েছে। কারণ চলমান আন্দোলন দীর্ঘায়িত হতে পারে সেই বিবেচনায় এ কৌশল অবলম্বন করা হয়েছে। যে কারণে নভেম্বরের প্রথম দশদিনের হরতাল অবরোধ কর্মসূচিতে রাজপথে দেখা মেলেনি নেতাকর্মীদের। কেননা একই সময় সবাই গ্রেফতার বা কর্মসূচি পালনে শক্তি হারানোর পক্ষে নয়। তবে, প্রত্যেক নেতা নিজ নিজ অবস্থানে থেকে দলের জন্য কাজ করছেন।
নেতাদের ধারণা, ১৪ নভেম্বর বা তার কাছাকাছি সময়ে তফসিল ঘোষণা হতে করতে পারে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এরই মধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ (সিইসি) নির্বাচন কমিশনাররা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করেছেন। রাষ্ট্রপতি তফসিল ঘোষণার জন্য সম্মতি দিয়েছেন বলেও জানিয়েছেন সিইসি। অর্থাৎ তফসিল ঘোষণা এখন সময়ের ব্যাপার। তফসিলকে কেন্দ্র করে আন্দোলনের গতি বাড়াতে পরিকল্পনা অনুযায়ী এগোচ্ছে দলটি।
তফসিল ঘোষণা পরবর্তী কর্মসূচি নিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানসহ জেলের বাইরে থাকা সিনিয়র নেতারা— দলের কেন্দ্রীয়, জেলা, উপজেলা এমনকি গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটের নেতাদের পরামর্শ নিচ্ছেন। এছাড়া জামায়াতে ইসলামী, গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, সমমনা জোট, এলডিপি ও গণঅধিকার পরিষদসহ যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের সঙ্গে কথা হয়েছে বিএনপির হাইকমান্ডের। পাশাপাশি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ কয়েকটি ইসলামী দলকে তফসিলকেন্দ্রিক আন্দোলনে পাশে চায় বিএনপি। এ বিষয়ে কাজ করছেন বিএনপি নেতারা।
অন্যদিকে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, সরকারকে দাবি মানাতে যা কিছু করার দরকার দেশের মানুষ তাই করবে। যারা ভাবছেন গ্রেফতার করে আন্দোলন দমানো যাবে তারা বোকার স্বর্গে বাস করছেন।