ঢাকা ০৫:৪৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪

ডেভিড ম্যালপাস হলেন বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট

আন্তর্জাতিক ডেস্ক :   প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মনোনীত যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ডেভিড ম্যালপাস বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনের আনুষ্ঠানিক অনুমোদন পেলেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, বিশ্ব ব্যাংকের নির্বাহী পর্ষদের সদস্যরা শুক্রবার সর্বসম্মতিক্রমে ১৩তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাকে অনুমোদন দেন। আগামী মঙ্গলবার থেকে পাঁচ বছরের জন্য বিশ্ব ব্যাংক গ্রুপের নেতৃত্ব দেবেন বিতর্কিত এই ব্যক্তি।ডোনাল্ড ট্রাম্পের অনুগত ম্যালপাস ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারের সময় ট্রাম্পের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ছিলেন। গত ফেব্রয়ারিতে ট্রাম্প ম্যালপাসকে বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট পদে মনোনয়নের ঘোষণা দেওয়ার পর বিতর্কের জন্ম হয়। বিশ্ব ব্যাংক, আইএমএফের সমালোচনা করে আসা এই মার্কিন অর্থনীতিবিদ বিশ্ব ব্যাংকের ভূমিকা খর্ব করতে পারেন বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেন অনেকে।

বিশ্ব ব্যাংক ‘অনেক বড়’ বলে মনে করেন ডেভিড ম্যালপাস। চীনের মতো মধ্যম আয়ের দেশগুলোকে কম ঋণ দেওয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেছিলেন তিনি। তার যুক্তি, এই দেশগুলো অর্থনৈতিকভাবে যথেষ্ট শক্তিশালী। বিবিসি বলছে, অর্থনীতির ‘বিশ্বধারাকেই’ (গ্লোবাল অর্ডার) চ্যালেঞ্জ করেছিলেন ম্যালপাস।

২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র নীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক থিংক ট্যাংক কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসের এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছিলেন, “বহুপাক্ষিকতা প্রকৃত অর্থে অনেক বিস্তৃত হয়েছে-এই জায়গা থেকে তা যুক্তরাষ্ট্র ও বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধিকে ব্যাহত করছে।” কেবল তাই নয়। বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম যখন বিশ্ব ব্যাংকের অংশীদারদের কাছে তহবিল যোগানের আহ্বান জানিয়েছিলেন, সে সময় ব্যাংকে সংস্কারের বিনিময়ে তার বন্দোবস্ত করতে এগিয়ে আসেন ডেভিড ম্যালপাস।

চীনকে ঋণ দেওয়া ঠেকাতে বিশ্ব ব্যাংককে চাপ প্রয়োগকারী ম্যালপাস গত বছর সংস্থার ঋণ বিতরণ পদ্ধতির সংস্কার আলোচনায় সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। সে সময় যেসব সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয় তার মধ্যে মধ্য আয়ের দেশগুলোকে আরও বেসরকারি খাতের দিকে ঝোঁকানো এবং বিশ্ব ব্যাংক কর্মীদের বেতন বৃদ্ধি সীমিত করার বিষয় রয়েছে। বিশ্ব ব্যাংকের ২৫ সদস্যের নির্বাহী পর্ষদের সবাই প্রেসিডেন্ট পদে ম্যালপাসকে সমর্থন জানিয়েছেন। এখানে চীনের প্রতিনিধি সংখ্যা তৃতীয় সর্বোচ্চ হলেও তারাও আপত্তি করেননি।

যুক্তরাষ্ট্রের ভিলানোভা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ক্রিস্টোফার কিলবি বিবিসিকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রার্থীকে পরাজিত করা যাবে না বুঝতে পেরেই চীন ও অন্যান্য অংশীদাররা ম্যালপাসের বিপক্ষে যাননি বলেই তার ধারণা। “যেহেতু তারা দেখেছে যে, কেউ ট্রাম্পের বিরোধিতা করলে তিনি তাকে শাস্তি দেন, তাই তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে লড়তে চায়নি।”

বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্ব ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা হয়। তহবিলের সবচেয়ে বড় যোগানদাতা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রই সব সময় প্রতিষ্ঠানটির প্রধান বেছে দিয়ে আসছে, যদিও এ বিষয়ে কোনো লিখিত চুক্তি নেই।

২০১২ সাল থেকে বিশ্ব ব্যাংকের নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন জিম ইয়ং কিম। ২০১৭ সালে ৫৯ বছরের জিম দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হন, ২০২২ সাল তার মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল। মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার তিন বছর আগেই গত ৭ জানুয়ারি কিম আকস্মিকভাবে পদত্যাগের ঘোষণা দেন, যা ১ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর হয়। এরপর থেকে বিশ্ব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। ম্যালপাস দায়িত্ব নেওয়ার পর ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে দরিদ্র দেশগুলোর প্রাধান্য সীমিত হতে পারে বলে বিবিসির প্রতিবদেনে শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

মির্জাগঞ্জে রাতের আধারে বসতঘর লুটপাট

ডেভিড ম্যালপাস হলেন বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট

আপডেট টাইম : ০২:১১:৩২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৬ এপ্রিল ২০১৯

আন্তর্জাতিক ডেস্ক :   প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মনোনীত যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ডেভিড ম্যালপাস বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনের আনুষ্ঠানিক অনুমোদন পেলেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, বিশ্ব ব্যাংকের নির্বাহী পর্ষদের সদস্যরা শুক্রবার সর্বসম্মতিক্রমে ১৩তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাকে অনুমোদন দেন। আগামী মঙ্গলবার থেকে পাঁচ বছরের জন্য বিশ্ব ব্যাংক গ্রুপের নেতৃত্ব দেবেন বিতর্কিত এই ব্যক্তি।ডোনাল্ড ট্রাম্পের অনুগত ম্যালপাস ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারের সময় ট্রাম্পের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ছিলেন। গত ফেব্রয়ারিতে ট্রাম্প ম্যালপাসকে বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট পদে মনোনয়নের ঘোষণা দেওয়ার পর বিতর্কের জন্ম হয়। বিশ্ব ব্যাংক, আইএমএফের সমালোচনা করে আসা এই মার্কিন অর্থনীতিবিদ বিশ্ব ব্যাংকের ভূমিকা খর্ব করতে পারেন বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেন অনেকে।

বিশ্ব ব্যাংক ‘অনেক বড়’ বলে মনে করেন ডেভিড ম্যালপাস। চীনের মতো মধ্যম আয়ের দেশগুলোকে কম ঋণ দেওয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেছিলেন তিনি। তার যুক্তি, এই দেশগুলো অর্থনৈতিকভাবে যথেষ্ট শক্তিশালী। বিবিসি বলছে, অর্থনীতির ‘বিশ্বধারাকেই’ (গ্লোবাল অর্ডার) চ্যালেঞ্জ করেছিলেন ম্যালপাস।

২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র নীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক থিংক ট্যাংক কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসের এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছিলেন, “বহুপাক্ষিকতা প্রকৃত অর্থে অনেক বিস্তৃত হয়েছে-এই জায়গা থেকে তা যুক্তরাষ্ট্র ও বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধিকে ব্যাহত করছে।” কেবল তাই নয়। বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম যখন বিশ্ব ব্যাংকের অংশীদারদের কাছে তহবিল যোগানের আহ্বান জানিয়েছিলেন, সে সময় ব্যাংকে সংস্কারের বিনিময়ে তার বন্দোবস্ত করতে এগিয়ে আসেন ডেভিড ম্যালপাস।

চীনকে ঋণ দেওয়া ঠেকাতে বিশ্ব ব্যাংককে চাপ প্রয়োগকারী ম্যালপাস গত বছর সংস্থার ঋণ বিতরণ পদ্ধতির সংস্কার আলোচনায় সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। সে সময় যেসব সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয় তার মধ্যে মধ্য আয়ের দেশগুলোকে আরও বেসরকারি খাতের দিকে ঝোঁকানো এবং বিশ্ব ব্যাংক কর্মীদের বেতন বৃদ্ধি সীমিত করার বিষয় রয়েছে। বিশ্ব ব্যাংকের ২৫ সদস্যের নির্বাহী পর্ষদের সবাই প্রেসিডেন্ট পদে ম্যালপাসকে সমর্থন জানিয়েছেন। এখানে চীনের প্রতিনিধি সংখ্যা তৃতীয় সর্বোচ্চ হলেও তারাও আপত্তি করেননি।

যুক্তরাষ্ট্রের ভিলানোভা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ক্রিস্টোফার কিলবি বিবিসিকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রার্থীকে পরাজিত করা যাবে না বুঝতে পেরেই চীন ও অন্যান্য অংশীদাররা ম্যালপাসের বিপক্ষে যাননি বলেই তার ধারণা। “যেহেতু তারা দেখেছে যে, কেউ ট্রাম্পের বিরোধিতা করলে তিনি তাকে শাস্তি দেন, তাই তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে লড়তে চায়নি।”

বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্ব ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা হয়। তহবিলের সবচেয়ে বড় যোগানদাতা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রই সব সময় প্রতিষ্ঠানটির প্রধান বেছে দিয়ে আসছে, যদিও এ বিষয়ে কোনো লিখিত চুক্তি নেই।

২০১২ সাল থেকে বিশ্ব ব্যাংকের নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন জিম ইয়ং কিম। ২০১৭ সালে ৫৯ বছরের জিম দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হন, ২০২২ সাল তার মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল। মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার তিন বছর আগেই গত ৭ জানুয়ারি কিম আকস্মিকভাবে পদত্যাগের ঘোষণা দেন, যা ১ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর হয়। এরপর থেকে বিশ্ব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। ম্যালপাস দায়িত্ব নেওয়ার পর ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে দরিদ্র দেশগুলোর প্রাধান্য সীমিত হতে পারে বলে বিবিসির প্রতিবদেনে শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।