ঢাকা ০৮:০২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৫

কর্তৃপক্ষের অবহেলায় ভোলার বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল লঞ্চঘাটের বেহাল দশা, ভোগান্তিতে সাধারণ যাত্রীরা 

মিলি সিকদার, ভোলা প্রতিনিধি

 

বিআইডব্লিউটিএ এর অবহেলায় ভোলা জেলার দৌলতখান উপজেলার বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল লঞ্চঘাটের বেহাল অবস্থায় পরিনত হয়েছে। এ বেহাল অবস্থার কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন লঞ্চ ঘাটে আসা সাধারণ যাত্রীরা।

 

একসময় ভোলা জেলা থেকে রাজধানী ঢাকা, নোয়াখালী, ফেনী ও লক্ষ্মীপুরের সাথে যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম ছিল ভোলার দৌলতখান উপজেলার শহীদ সিপাহী বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল লঞ্চঘাট। ৩১৬ দশমিক ৯৯ বর্গকিলোমিটার আয়তনের তৎকালীন সময়ের এ মহকুমা শহরটিতে এখন দেড় লাখ মানুষের বসবাস। এখানকার অধিবাসীদের সাথে দেশের বিভিন্ন জেলায় যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম-ই হচ্ছে নৌপথ। বিংশ শতাব্দীর শেষ নাগাদ এখানকার নদীপথে যোগাযোগে ছিলোনা কোন পন্টুন বা জেটি। হাজারো যাত্রীকে একহাঁটু কাদা আর পানির মধ্য দিয়েই লঞ্চে ওঠা নামা করতে হত।

 

জানা যায়, জনগণের দুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে ১৯৯৭ সালে ভোলার তৎসময়ের জেলা প্রশাসক আব্দুল মান্নান এবং দৌলতখান উপজেলার সাবেক ইউএনও জেএন বিশ্বাস এখানে একটি লঞ্চঘাট ও পন্টুন নির্মাণের পদক্ষেপ নেন। তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ২০০৫ সালে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী মোশারেফ হোসেন শাজাহান তখন নৌপরিবহন মন্ত্রীর মাধ্যমে দৌলতখানের লঞ্চঘাটে একটি পন্টুন বরাদ্দ করেন। এরপর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ভোলাবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক মো. বেলায়েত হোসেন এ পন্টুনটির নামকরণ করেন, ভোলার কৃতি সন্তান বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামালের নামে।

 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দৌলতখানের ভবানীপুর ইউনিয়নের মেঘনা পাড়ের বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল লঞ্চঘাটে বহু বছর আগের স্থাপিত পন্টুনটি একেবারেই নাজুক ও বেহাল অবস্থায় পড়ে আছে।

 

স্থানীয় বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের সাথে কথা হলে তারা জানান, প্রতিদিন এ ঘাট থেকে দু’টি লঞ্চ ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় এবং ঢাকা থেকে দু’টি ছেড়ে আসে। ঢাকা-চরফ্যাশন ও হাতিয়া-ঢাকা রুটের লঞ্চগুলোও এ ঘাটে নোঙ্গর করে। এ ঘাট থেকে আবার নোয়াখালীর আলেকজান্ডার রুটে আসা যাওয়া করে আরো বেশ কয়েকটি যাত্রীবাহী লঞ্চ। এখানকার ব্যবসা বাণিজ্যের সকল কারবারই হয়ে থাকে এ ঘাট দিয়ে। কিন্তু কালের বিবর্তনে ওই লঞ্চঘাটের পন্টুনটি আর রক্ষণাবেক্ষণ না করায় মরিচা ধরে বিবর্ণ হয়ে গেছে। ভেঙ্গে গেছে গার্ডার। যাত্রীরা ওঠানামা করতে পারছেনা। এমনকি পন্টুনের গায়ে লেখা বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামালের নামটিও মুছে গেছে। তাই তারা অর্ন্তবর্তী সরকারের প্রতি বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল লঞ্চঘাটের পন্টুনটির সংস্কারের দাবি জানান।

 

এ লঞ্চঘাটে ঢাকার উদ্দেশ্যে আসা লঞ্চযাত্রী লিটন হোসেন, কামাল ও সুরমা বেগম এর সাথে কথা হয়। তারা বলেন, এই ঘাটের পন্টুনটি এখন একটি মরণফাঁদে রুপ নিয়েছে। লঞ্চে উঠতে গিয়ে শিশুসহ বহু নারী-পুরুষ আহত হয়েছেন। এখনো হচ্ছে। পন্টুনের বেহাল দশার কারণে অনেক সময় লঞ্চগুলো নদীর পাড়েই ভিড়ছে। হলে যাত্রীদের ওঠানামায় চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

 

দৌলতখান প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান বলেন, দীর্ঘদিন যাবত এই লঞ্চঘাটটি জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় কতৃপক্ষক এটি দেখেও যেন না দেখার ভান করছে। লাখ লাখ মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে অতি দ্রুত লঞ্চঘাটি সংস্কার করা দরকার।

 

এ বিষয়ে দৌলতখান লঞ্চঘাটের ইজারাদার মনিরুল ইসলাম বলেন, এই ঘাটে একটি বহুতল ভবন সহ নতুন ভাবে ঘাটতি তৈরির কাজ অল্প কিছুদিনের মধ্যেই শুরু হবে। তবে আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত স্থান গুলো যাতে সংস্কার করা যায়, সেই লক্ষ্যে আমরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর একটি লিখিত দেব।

 

দৌলতখান উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা নিয়তি রাণী কৈরী বলেন, ইতিমধ্যে ঘাটটি নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে পরিদর্শন করে বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল পন্টুনটি মেরামত ও যুগোপযোগী করতে ইতিমধ্যেই উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে একটি প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। সেই প্রস্তাবনার আলোকে প্রকল্প গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যা খুব শীগ্রই বাস্তবায়ন হবে। তবে যাতায়াতের জন্য যে সকল রাস্তাঘাট মেরামতযোগ্য তা আমরা ইতিমধ্যেই মেরামত করে দিয়েছি। তবে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে তা আবারো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

 

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)’র ভোলা অঞ্চলের বন্দর কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম খান জানান, ভোলার ক্ষতিগ্রস্ত টার্মিনালি গুলো মেরামতের জন্য ইতিমধ্যে আমরা আবেদন পাঠিয়েছি। তবে দৌলতখান লঞ্চ ঘাটের টার্মিনালটি যদি বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে ইজারাদার লিখিতভাবে আমাদেরকে জানালে আমরা অতি দ্রুত সেটি সংস্কারের ব্যবস্থা গ্রহণ করো।

 

ভোলার জেলা প্রশাসক মোঃ আজাদ জাহান বলেন, এ বিষয়টি বিআইডব্লিউটিএ পরিচালনা করছে। আমি খোঁজখবর নিয়ে দেখছি। এই লঞ্চঘাটটি কে আধুনিকায়ন করে বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামালের স্মৃতিকে অক্ষুন্ন রাখতে সবরকমের পদক্ষেপ নেয়া হবে।

Tag :

কর্তৃপক্ষের অবহেলায় ভোলার বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল লঞ্চঘাটের বেহাল দশা, ভোগান্তিতে সাধারণ যাত্রীরা 

কর্তৃপক্ষের অবহেলায় ভোলার বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল লঞ্চঘাটের বেহাল দশা, ভোগান্তিতে সাধারণ যাত্রীরা 

আপডেট টাইম : ০৮:০২:২৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৫

মিলি সিকদার, ভোলা প্রতিনিধি

 

বিআইডব্লিউটিএ এর অবহেলায় ভোলা জেলার দৌলতখান উপজেলার বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল লঞ্চঘাটের বেহাল অবস্থায় পরিনত হয়েছে। এ বেহাল অবস্থার কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন লঞ্চ ঘাটে আসা সাধারণ যাত্রীরা।

 

একসময় ভোলা জেলা থেকে রাজধানী ঢাকা, নোয়াখালী, ফেনী ও লক্ষ্মীপুরের সাথে যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম ছিল ভোলার দৌলতখান উপজেলার শহীদ সিপাহী বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল লঞ্চঘাট। ৩১৬ দশমিক ৯৯ বর্গকিলোমিটার আয়তনের তৎকালীন সময়ের এ মহকুমা শহরটিতে এখন দেড় লাখ মানুষের বসবাস। এখানকার অধিবাসীদের সাথে দেশের বিভিন্ন জেলায় যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম-ই হচ্ছে নৌপথ। বিংশ শতাব্দীর শেষ নাগাদ এখানকার নদীপথে যোগাযোগে ছিলোনা কোন পন্টুন বা জেটি। হাজারো যাত্রীকে একহাঁটু কাদা আর পানির মধ্য দিয়েই লঞ্চে ওঠা নামা করতে হত।

 

জানা যায়, জনগণের দুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে ১৯৯৭ সালে ভোলার তৎসময়ের জেলা প্রশাসক আব্দুল মান্নান এবং দৌলতখান উপজেলার সাবেক ইউএনও জেএন বিশ্বাস এখানে একটি লঞ্চঘাট ও পন্টুন নির্মাণের পদক্ষেপ নেন। তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ২০০৫ সালে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী মোশারেফ হোসেন শাজাহান তখন নৌপরিবহন মন্ত্রীর মাধ্যমে দৌলতখানের লঞ্চঘাটে একটি পন্টুন বরাদ্দ করেন। এরপর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ভোলাবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক মো. বেলায়েত হোসেন এ পন্টুনটির নামকরণ করেন, ভোলার কৃতি সন্তান বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামালের নামে।

 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দৌলতখানের ভবানীপুর ইউনিয়নের মেঘনা পাড়ের বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল লঞ্চঘাটে বহু বছর আগের স্থাপিত পন্টুনটি একেবারেই নাজুক ও বেহাল অবস্থায় পড়ে আছে।

 

স্থানীয় বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের সাথে কথা হলে তারা জানান, প্রতিদিন এ ঘাট থেকে দু’টি লঞ্চ ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় এবং ঢাকা থেকে দু’টি ছেড়ে আসে। ঢাকা-চরফ্যাশন ও হাতিয়া-ঢাকা রুটের লঞ্চগুলোও এ ঘাটে নোঙ্গর করে। এ ঘাট থেকে আবার নোয়াখালীর আলেকজান্ডার রুটে আসা যাওয়া করে আরো বেশ কয়েকটি যাত্রীবাহী লঞ্চ। এখানকার ব্যবসা বাণিজ্যের সকল কারবারই হয়ে থাকে এ ঘাট দিয়ে। কিন্তু কালের বিবর্তনে ওই লঞ্চঘাটের পন্টুনটি আর রক্ষণাবেক্ষণ না করায় মরিচা ধরে বিবর্ণ হয়ে গেছে। ভেঙ্গে গেছে গার্ডার। যাত্রীরা ওঠানামা করতে পারছেনা। এমনকি পন্টুনের গায়ে লেখা বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামালের নামটিও মুছে গেছে। তাই তারা অর্ন্তবর্তী সরকারের প্রতি বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল লঞ্চঘাটের পন্টুনটির সংস্কারের দাবি জানান।

 

এ লঞ্চঘাটে ঢাকার উদ্দেশ্যে আসা লঞ্চযাত্রী লিটন হোসেন, কামাল ও সুরমা বেগম এর সাথে কথা হয়। তারা বলেন, এই ঘাটের পন্টুনটি এখন একটি মরণফাঁদে রুপ নিয়েছে। লঞ্চে উঠতে গিয়ে শিশুসহ বহু নারী-পুরুষ আহত হয়েছেন। এখনো হচ্ছে। পন্টুনের বেহাল দশার কারণে অনেক সময় লঞ্চগুলো নদীর পাড়েই ভিড়ছে। হলে যাত্রীদের ওঠানামায় চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

 

দৌলতখান প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান বলেন, দীর্ঘদিন যাবত এই লঞ্চঘাটটি জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় কতৃপক্ষক এটি দেখেও যেন না দেখার ভান করছে। লাখ লাখ মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে অতি দ্রুত লঞ্চঘাটি সংস্কার করা দরকার।

 

এ বিষয়ে দৌলতখান লঞ্চঘাটের ইজারাদার মনিরুল ইসলাম বলেন, এই ঘাটে একটি বহুতল ভবন সহ নতুন ভাবে ঘাটতি তৈরির কাজ অল্প কিছুদিনের মধ্যেই শুরু হবে। তবে আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত স্থান গুলো যাতে সংস্কার করা যায়, সেই লক্ষ্যে আমরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর একটি লিখিত দেব।

 

দৌলতখান উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা নিয়তি রাণী কৈরী বলেন, ইতিমধ্যে ঘাটটি নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে পরিদর্শন করে বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল পন্টুনটি মেরামত ও যুগোপযোগী করতে ইতিমধ্যেই উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে একটি প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। সেই প্রস্তাবনার আলোকে প্রকল্প গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যা খুব শীগ্রই বাস্তবায়ন হবে। তবে যাতায়াতের জন্য যে সকল রাস্তাঘাট মেরামতযোগ্য তা আমরা ইতিমধ্যেই মেরামত করে দিয়েছি। তবে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে তা আবারো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

 

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)’র ভোলা অঞ্চলের বন্দর কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম খান জানান, ভোলার ক্ষতিগ্রস্ত টার্মিনালি গুলো মেরামতের জন্য ইতিমধ্যে আমরা আবেদন পাঠিয়েছি। তবে দৌলতখান লঞ্চ ঘাটের টার্মিনালটি যদি বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে ইজারাদার লিখিতভাবে আমাদেরকে জানালে আমরা অতি দ্রুত সেটি সংস্কারের ব্যবস্থা গ্রহণ করো।

 

ভোলার জেলা প্রশাসক মোঃ আজাদ জাহান বলেন, এ বিষয়টি বিআইডব্লিউটিএ পরিচালনা করছে। আমি খোঁজখবর নিয়ে দেখছি। এই লঞ্চঘাটটি কে আধুনিকায়ন করে বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামালের স্মৃতিকে অক্ষুন্ন রাখতে সবরকমের পদক্ষেপ নেয়া হবে।