ঢাকা ০৮:০৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪

ফরিদপুরে সরকারি বালু অবৈধভাবে বিক্রি, রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার

 

মোঃরিফাত ইসলাম।ফরিদপুর প্রতিনিধি:
নদী খনন হচ্ছে সরকারি টাকায়। উত্তোলন হওয়া বালু যাচ্ছে সিন্ডিকেটের গোলায়। মজুদ হচ্ছে ব্যাক্তিগত যায়গায়,ফসলি জমি,স্কুলের মাঠ,সরকারি রাস্তাসহ বিভিন্ন জায়গায়। আর এই থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে ফরিদপুরের আলিয়াবাদ ইউনিয়নের গদাধর ডাঙ্গী গ্রামের প্রভাবশালী বালু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। ‘ফাও’ বালুর রমরমা ব্যবসার ১০-১৫ জনের দলে রয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা,ইউএনও অফিস সহায়ক, স্থানীয় সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্য, ও বিভন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও স্থানীয় প্রভাবশালীরা। প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছে এ ব্যাপারে আমাদের কাছে কোন অভিযোগ নেই। আর পানি উন্নয়ন বোর্ডে কর্মকর্তারা বলছে বালু বিক্রি বিষয়ে তারা কিছুই জানে না কারন বালুর মালিক স্থানীয় প্রশাসন।

জানা যায়, ফরিদপুর সদর -চরভদ্রাসন উপজেলা এলাকায় পদ্মা নদীতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে ফরিদপুর সিএনবি ঘাট থেকে চরভদ্রাসন গোপলপুর পর্যন্ত নদী খনন কাজ শুরু হয়েছে প্রায় ৬ মাস আগে। তার আগেই বালু ব্যবসার সব বন্দোবস্ত পাকাপাকি হয়। বালু ব্যবসার দলে রয়েছে এমন একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, ফরিদপুর জেলা প্রশাসনের একজন কর্মকর্তার নিয়োজিত স্থানীয় কয়েকজন এজেন্ট বালু বিক্রির সব ঠিকঠাক করেছেন। বালুর দাম গ্রহণ করেন এজেন্ট নিজেই। বুধবার সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে গা-ঢাকা দেন সবাই। ওই জায়গায় এবার নদী খননে প্রয় ৩০/৩৫ কোটি ঘনফুট বালু উঠতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রতি ফুট বালুর মূল্য ধরা হয়েছে ৮/৯ টাকা। সেই হিসেবে বিনা পুঁজির এই ব্যবসায় ২৫০-৩০০ কোটি টাকা পকেটে ঢুকবে সিন্ডিকেট সদস্যদের। এদিকে এই বালু মজুদ করা হচ্ছে ব্যাক্তিগত যায়গায়,ফসলি জমি,স্কুলের মাঠ,সরকারি রাস্তাসহ বিভিন্ন জায়গায়। বালুর বিশাল স্তুপ আর বালু বোঝাই ট্রাকের চলাচলের কারণে ফরিদপুর-গজারিয়া-চরভদ্রাসন-সদরপুর সহ পদ্মা নদীর পারবর্তী কাচাঁ সড়ক,পাকা সড়ক,ইটের রাস্তা হুমকির মুখে।এছাড়া বালু ভর্তি ট্রাকের কোন কভার না থাকায় যে কোনো সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা।

স্থানীয় এলাকাবাসী জানায়, সাবেক আলীয়াবাদের চেয়ারম্যান ও সাবেক আলীবাদ আ.লীগ সভাপতি আক্তার বিশ্বাসের নেতৃত্বে স্থানীয় ব্যাবসায়ী ও যুবদল নেতা মো: রিয়াজুল, ইউপি মেম্বার এখলাছ, চুন্নু বিশ্বাস ও রুবেলে একত্রি হয়ে ফরিদপুর সদর ইউএনও অফিসের সিএ কামালের সহযোগিতায় এই সরকারি বালু অবৈধভাবে বিক্রি করছে। তারা ফসলি জমি,খেলার মাঠ,সরকারি রাস্তা কোনটা বাদ রাখছে না।

ভূক্তভোগি বীরবল জানান যুবদলের সভাপতি রিয়াজুলকে আমার বাড়ির অল্প একটু জমি ভরাট করার জন্য সাতাশ হাজার টাকা দিয়েছি।আগে টাকা নিয়ে তারপর আমার বাড়ি ভরাট করেছে।

আরেক ভূক্তভোগি ফরিদ হোসেন জানান, আমার ৮ শতাংশ যায়গা ভরাট করার জন্য ১৫ হাজার টাকা দিয়েছি।এই টাকা নিয়েছে চুন্নু বিশ্বাস।
মান্নান খাঁ নামে আরেকজন জানান আমার দুইনল জায়গার জন্য আক্তার বিশ্বাসের নির্দেশে ২০ হাজার টাকা নিয়েছে রিয়াজুল।

স্থানীয় আলীগ নেতা ও সমাজসেবক মোঃ রফিক বলেন,সরকারি বালু ইজারার মাধ্যমে নিয়ে বিক্রি করায় অনেকে উপকৃত হচ্ছে। দেশ উন্নতি হচ্ছে।কিন্তু এই সরকারি বালি নিলামবিহীন ও অবৈধভাবে বিক্রি করায় আমরা হতাশ।এতে সরকারের রাজস্ব হারাচ্ছে।ফসলি জমি,খেলার মাঠ ধ্বংশ হচ্ছে।আমি এই বালু সিন্ডিকেটের শাস্তি কামনা করছি।

তবে অভিযোগের বিষয়ে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আক্তার বিশ্বাস জানান, নদী খনন করে বালু কোথাও না কোথাও রাখতে হয়। আমি প্রশাসনের সাথে স্থানীয় জমি গৃহিতাদের সমন্বয় করে দিয়েছি। আমি তাদের কাছে কোনো বালু বিক্রি করছি না। আমরাও ব্যবসা করছি না।

যুবদল নেতা রিয়াজুল জানান, টাকা নিয়েছি কেউ বললেই তো হবে না।আমি নিজে আমার জমি ভরাট করেছি বিনামূল্যে।তদন্তে যদি আমি এর সাথে জড়িত হই তাহলে আমার যে শাস্তি হবে মেনে নিব।

অভিযোগের প্রেক্ষিতে ইউএনও অফিসের সিএ কামাল হোসেন বলেন,“বালু বিক্রির সাথে আমার কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। আপনাদের কোন অভিযোগ থাকলে ইউএনওর সাথে কথা বলেন”।

ইউএনও ফরিদপুর সদর এর সাথে যোগাযোগ করতে তার কার্যালয়ে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

গ্রাম পুলিশ সদস্যকে ধর্ষণের অভিযোগে এক ইউপি চেয়ারম্যান ও সহযোগীর বিরুদ্ধে মামলা

ফরিদপুরে সরকারি বালু অবৈধভাবে বিক্রি, রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার

আপডেট টাইম : ০৭:৪৪:১৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২ এপ্রিল ২০২১

 

মোঃরিফাত ইসলাম।ফরিদপুর প্রতিনিধি:
নদী খনন হচ্ছে সরকারি টাকায়। উত্তোলন হওয়া বালু যাচ্ছে সিন্ডিকেটের গোলায়। মজুদ হচ্ছে ব্যাক্তিগত যায়গায়,ফসলি জমি,স্কুলের মাঠ,সরকারি রাস্তাসহ বিভিন্ন জায়গায়। আর এই থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে ফরিদপুরের আলিয়াবাদ ইউনিয়নের গদাধর ডাঙ্গী গ্রামের প্রভাবশালী বালু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। ‘ফাও’ বালুর রমরমা ব্যবসার ১০-১৫ জনের দলে রয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা,ইউএনও অফিস সহায়ক, স্থানীয় সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্য, ও বিভন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও স্থানীয় প্রভাবশালীরা। প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছে এ ব্যাপারে আমাদের কাছে কোন অভিযোগ নেই। আর পানি উন্নয়ন বোর্ডে কর্মকর্তারা বলছে বালু বিক্রি বিষয়ে তারা কিছুই জানে না কারন বালুর মালিক স্থানীয় প্রশাসন।

জানা যায়, ফরিদপুর সদর -চরভদ্রাসন উপজেলা এলাকায় পদ্মা নদীতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে ফরিদপুর সিএনবি ঘাট থেকে চরভদ্রাসন গোপলপুর পর্যন্ত নদী খনন কাজ শুরু হয়েছে প্রায় ৬ মাস আগে। তার আগেই বালু ব্যবসার সব বন্দোবস্ত পাকাপাকি হয়। বালু ব্যবসার দলে রয়েছে এমন একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, ফরিদপুর জেলা প্রশাসনের একজন কর্মকর্তার নিয়োজিত স্থানীয় কয়েকজন এজেন্ট বালু বিক্রির সব ঠিকঠাক করেছেন। বালুর দাম গ্রহণ করেন এজেন্ট নিজেই। বুধবার সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে গা-ঢাকা দেন সবাই। ওই জায়গায় এবার নদী খননে প্রয় ৩০/৩৫ কোটি ঘনফুট বালু উঠতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রতি ফুট বালুর মূল্য ধরা হয়েছে ৮/৯ টাকা। সেই হিসেবে বিনা পুঁজির এই ব্যবসায় ২৫০-৩০০ কোটি টাকা পকেটে ঢুকবে সিন্ডিকেট সদস্যদের। এদিকে এই বালু মজুদ করা হচ্ছে ব্যাক্তিগত যায়গায়,ফসলি জমি,স্কুলের মাঠ,সরকারি রাস্তাসহ বিভিন্ন জায়গায়। বালুর বিশাল স্তুপ আর বালু বোঝাই ট্রাকের চলাচলের কারণে ফরিদপুর-গজারিয়া-চরভদ্রাসন-সদরপুর সহ পদ্মা নদীর পারবর্তী কাচাঁ সড়ক,পাকা সড়ক,ইটের রাস্তা হুমকির মুখে।এছাড়া বালু ভর্তি ট্রাকের কোন কভার না থাকায় যে কোনো সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা।

স্থানীয় এলাকাবাসী জানায়, সাবেক আলীয়াবাদের চেয়ারম্যান ও সাবেক আলীবাদ আ.লীগ সভাপতি আক্তার বিশ্বাসের নেতৃত্বে স্থানীয় ব্যাবসায়ী ও যুবদল নেতা মো: রিয়াজুল, ইউপি মেম্বার এখলাছ, চুন্নু বিশ্বাস ও রুবেলে একত্রি হয়ে ফরিদপুর সদর ইউএনও অফিসের সিএ কামালের সহযোগিতায় এই সরকারি বালু অবৈধভাবে বিক্রি করছে। তারা ফসলি জমি,খেলার মাঠ,সরকারি রাস্তা কোনটা বাদ রাখছে না।

ভূক্তভোগি বীরবল জানান যুবদলের সভাপতি রিয়াজুলকে আমার বাড়ির অল্প একটু জমি ভরাট করার জন্য সাতাশ হাজার টাকা দিয়েছি।আগে টাকা নিয়ে তারপর আমার বাড়ি ভরাট করেছে।

আরেক ভূক্তভোগি ফরিদ হোসেন জানান, আমার ৮ শতাংশ যায়গা ভরাট করার জন্য ১৫ হাজার টাকা দিয়েছি।এই টাকা নিয়েছে চুন্নু বিশ্বাস।
মান্নান খাঁ নামে আরেকজন জানান আমার দুইনল জায়গার জন্য আক্তার বিশ্বাসের নির্দেশে ২০ হাজার টাকা নিয়েছে রিয়াজুল।

স্থানীয় আলীগ নেতা ও সমাজসেবক মোঃ রফিক বলেন,সরকারি বালু ইজারার মাধ্যমে নিয়ে বিক্রি করায় অনেকে উপকৃত হচ্ছে। দেশ উন্নতি হচ্ছে।কিন্তু এই সরকারি বালি নিলামবিহীন ও অবৈধভাবে বিক্রি করায় আমরা হতাশ।এতে সরকারের রাজস্ব হারাচ্ছে।ফসলি জমি,খেলার মাঠ ধ্বংশ হচ্ছে।আমি এই বালু সিন্ডিকেটের শাস্তি কামনা করছি।

তবে অভিযোগের বিষয়ে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আক্তার বিশ্বাস জানান, নদী খনন করে বালু কোথাও না কোথাও রাখতে হয়। আমি প্রশাসনের সাথে স্থানীয় জমি গৃহিতাদের সমন্বয় করে দিয়েছি। আমি তাদের কাছে কোনো বালু বিক্রি করছি না। আমরাও ব্যবসা করছি না।

যুবদল নেতা রিয়াজুল জানান, টাকা নিয়েছি কেউ বললেই তো হবে না।আমি নিজে আমার জমি ভরাট করেছি বিনামূল্যে।তদন্তে যদি আমি এর সাথে জড়িত হই তাহলে আমার যে শাস্তি হবে মেনে নিব।

অভিযোগের প্রেক্ষিতে ইউএনও অফিসের সিএ কামাল হোসেন বলেন,“বালু বিক্রির সাথে আমার কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। আপনাদের কোন অভিযোগ থাকলে ইউএনওর সাথে কথা বলেন”।

ইউএনও ফরিদপুর সদর এর সাথে যোগাযোগ করতে তার কার্যালয়ে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি।